ত্রিভুজ প্রেমের বলি জেসিকে যেভাবে হত্যা করা হয়

0 124

অনলাইন ডেস্ক:

মুন্সীগঞ্জের বহুল আলোচিত স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ জেসি (১৬) হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিজয় রহমানকে (১৯) গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর ওয়ারী থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আজ রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ৩ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের কোর্টগাঁও এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। জেসিকা হত্যার প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, স্বজনরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩-এর একটি দল রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে বিজয় রহমানকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন,  ‘বিজয় ২০১৯ সালে একই স্কুলে পড়ুয়া অপর আসামি আদিবা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। আদিবা আক্তারের সঙ্গে সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে বিজয় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে জেসিকার সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। বিজয় উভয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রেখে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অপর আসামি আদিবাকে গোপনে বিয়ে করেন।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পরবর্তীতে বিজয় ও অপর আসামি আদিবার বিয়ের বিষয়টি জেসিকা মাহমুদ জেসি জানতে পারে এবং বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন কথোপকথনের রেকর্ড মামলার অপর আসামি আদিবার মেসেঞ্জারে পাঠায়। বিষয়টি নিয়ে বিজয় ও অপর আসামি আদিবার মাঝে বিভিন্ন সময় কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া-বিবাদ হলে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বিজয় জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, মূলত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে অপর আসামি আদিবার সঙ্গে আলোচনা করেন এবং গত ১ জানুয়ারি উভয়ে মিলে ভিকটিম জেসিকা মাহমুদ জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন বিকেলে আদিবা ভুক্তভোগী জেসির সঙ্গে দেখা করে। তখন বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন সময়ের কথোপকথনের রেকর্ড দেখায় এবং এই সমস্যা মীমাংসার জন্য জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে আদিবা ফোন করে বিজয়কে ছাদে যেতে বলে।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছাদে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিজয় ও আদিবা জেসির গলাটিপে ধরলে শ্বাসরোধ হয়ে ভুক্তভোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে নিজেদেরকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য জেসির ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার নাটক সাজানোর চেষ্টা করে। এরপর, দুজনে মিলে জেসিকে অজ্ঞান অবস্থায় ছাদ থেকে নামিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে বাসার ভিতরে চলে যায়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘পরবর্তীতে পাশের বাসায় থাকা বিজয়ের চাচা ভুক্তভোগীকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করেন। পরে বিজয়  এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাসা থেকে নেমে আসে। একপর্যায়ে বিজয় ও তার বাবাসহ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ভুক্তভোগীকে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিজয় ভিকটিম জেসির ভাইকে জেসির অসুস্থতার কথা বলে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে আসতে বলে। জেসির ভাই হাসপাতালে এসে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান জেসি মারা গেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জেসির মৃত্যুর ঘটনা শুনে বিজয় এবং মামলার অপর আসামি আদিবা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। জেসির লাশ ময়নাতদন্ত শেষে জেসির ভাই জানতে পারেন, জেসিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে জেসির ভাই মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় বিজয় ও আদিবাসহ আরও ১ থেকে ২ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত ৪ জানুয়ারি আদিবাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন জেল-হাজতে রয়েছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.