আল্লামা শফীর জানাজায় মানুষের ঢল

0 245


না ফেরার দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী। শেষ হয়েছে তার জানাজা। প্রিয় ব্যক্তিত্বকে শেষ দেখার জন্য তার জানায় শরিক হবার জন্যে কয়েক লাখ মানুষ উপস্থিত হন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায়। শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন তার ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসূফ। জানাজা শেষে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হবে দেশের জ্যেষ্ঠ এ আলেমকে।

স্থানীয়রা এবং স্বেচ্ছাসেবকরা অনুমান করে জানিয়েছেন, জানাজায় প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ মানুষ উপস্থিত হন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে গেছেন আল্লামা শফীর ছাত্র, শিষ্য, ভক্ত ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ। কোরআন তেলাওয়াত, দোয়ায় মুখর হয় হাটহাজারী মাদরাসা প্রাঙ্গণ।

আল্লামা শফীর জানাজা ঘিরে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে ছিল হাজারো যানবাহন। বন্ধ হয় আশপাশের দুই কিলোমিটার এলাকায় রাস্তাঘাটের গাড়ি চলাচল। জনতার ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় প্রশাসনকে। পুরো এলাকাজুড়ে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও নিয়োজিত ছিলেন।


আজ শনিবার ফজরের পর থেকেই হাজার হাজার আলেম, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জড়ো হন। কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালীসহ আশপাশের জেলাগুলোর বহু কওমি মাদ্রাসা থেকে বিপুল শিক্ষার্থী ও আলেম জানাজায় অংশ নিতে আসেন।

রাজধানী ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আজ শনিবার সকাল ৯টায় আল্লামা শফীর মরদেহ মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে পৌঁছায়।

রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মারা যান শাহ আহমদ শফী। আহমদ শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আহমদ শফী বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুস্থতা ছাড়াও ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনে ভুগছিলেন। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে হেফাজতের আমিরকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আহমদ শফীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হয়। তাঁকে পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠের পাশে অবস্থিত আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ভর্তির কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে শূরা কমিটির সভায় মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন আল্লামা আহমদ শফী। তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও শূরা সভার প্রধান হিসেবে তাঁকে মনোনীত করা হয়েছিল।

আল্লামা আহমদ শফী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মরহুম বরকত আলী ও মায়ের নাম মরহুমা মেহেরুন্নেছা।

আহমদ শফী ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির নির্বাচিত হন। তিনি ইসলামী শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে ১০ বছর বয়সে ভর্তি হন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায়। সেখান থেকে হাদিস ও ফিকহ শাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯৪১ সালে চলে যান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায়। সেখানে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ-এর প্রেসিডেন্ট আল্লামা সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানীর কাছে আধ্যাত্মিক শিক্ষালাভ এবং তাঁর খেলাফতপ্রাপ্ত হন।

ভারত থেকে দেশে ফিরে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে দারুল উলুম হাটহাজারীতে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৮৬ সালে এই মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব নেন আহমদ শফী। এর পর থেকে টানা ৩৪ বছর তিনি ওই পদে ছিলেন। ২০০৮ সালে আল্লামা আহমদ শফী কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

আল্লামা আহমদ শফি স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর লেখা ‘হক্ব ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব’, ‘ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা’, ‘ইসলাম ও রাজনীতি’, ‘হাদিসসমূহের ব্যাখ্যা’সহ ২২টি প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে। তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, দেশ-বিদেশে ৫০ লাখের বেশি মুরিদ ও ভক্ত রয়েছে আল্লামা আহমদ শফীর।

Leave A Reply

Your email address will not be published.