আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস কোয়ার্টারে মুখোমুখি

0 153

অনলাইন ডেস্ক:

মেসির ১০০০তম ম্যাচ। স্মরণীয় রাখতেই নিজেকে মেলে ধরেছে ফুটবল বিশ্বের মুকুটধারী মহারাজা লিওনেল মেসি। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নক আউট পর্বের খেলায় নিজের করা গোল দিয়ে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে রাখেন। আর লিওনেল মেসি কেন বিশ্বসেরা সেটিই বার বার প্রমাণ দিচ্ছেন তিনি। যেন মেসি জিতে গেলে জিতে যায় আর্জেন্টিনা। অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণকৌশল যখন মেসিসহ গোটা আর্জেন্টাইন আক্রমণভাগকে বশ করে রেখেছিল, তখন ডেডলক ভাঙার কাজটা নিজের কাঁধেই নিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তার গোলেই যে ম্যাচের ৩৫ মিনিটে লিড নেয় আার্জেন্টিনা। যেটি বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে মেসির করা প্রথম গোল। আর এটি ছিল ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে মেসির ক্যারিয়ারের ১০০০তম ম্যাচ। তবে শেষ দিকে দারুণ এক গোলে আর্জেন্টিনাকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। অজিদের দৌড় থামে দ্বিতীয় রাউন্ডেই।

অন্যদিকে, নক আউটের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে ৩-১ গোলে হেরে কাতার বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ম্যাচের শুরু থেকে দুর্দান্ত খেলে ডাচরা। শুরুতে ২ গোলে পিছিয়ে পড়লেও চমকে ভরপুর বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল পাশার দান উল্টে দিতে। ৭৬ মিনিটে ব্যবধান কমানোর পর সে সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়। তবে ডামফ্রিসের গোলটিতে শেষ হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা। যে কারণে ২০০২ সালের পর আবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্নটা অধরাই থেকে গেছে। ৮ বছর পর বিশ্বকাপে ফিরে দারুণ জয়ে বিশ্বকাপের শেষ আট নিশ্চিত করেছে নেদারল্যান্ডস।

গল্পের শুরুটাই অবশ্য ভিন্নভাবে করতে পারত যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল তারা। তবে গোলরক্ষককে একা পেয়েও সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন ক্রিস্টিয়ান পুলিসিক। অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র বিদায়ে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস। হাইভোল্টেজ এই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবার রাত ১টায়। ম্যাচে আর্জেন্টাইন আরেক সুপারস্টার ডি-মারিয়াকে দেখা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। ইনজুরির কারণে ডি-মারিয়া নক আউট পর্বে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলতে পারেনি। তবে নক আউট পর্বের এই ম্যাচে আর্জেন্টাইন জাদুকর নিজে প্রথম গোল করার পর অন্য গোল ছিল অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষকের উপহার। যে উপহার লুফে নেন হুলিয়ান আলভারেজ। আর্জেন্টিনা ম্যাচ জিতল ২-১ গোলে।

এদিন ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনাকে ভয় না পাওয়ার কথা বলেছিল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের শুরুতেও ছিল সেই ছাপ। পোল্যান্ডের মতো নিচে নেমে না এসে মাঠে নিজেদের পজিশন ধরে রেখেই খেলা শুরু করে তারা। আর্জেন্টিনা পাসের পর পাস দিয়ে চেষ্টা করছিল জায়গা বের করে আক্রমণে যেতে। তবে মনোযোগ ধরে রেখে অস্ট্রেলিয়া খুব বেশি সুযোগ দিচ্ছিল না আর্জেন্টাইনদের। শুধু লিওনেল মেসিদের ঠেকিয়ে রাখা নয়, আক্রমণেও চোখ ছিল সকারুদের। কয়েকবার ওপরে উঠে আর্জেন্টাইন রক্ষণের পরীক্ষাও নিয়েছিল তারা। আর অস্ট্রেলিয়ার কৌশলের কারণে আর্জেন্টিনা চাইলেও অলআউট আক্রমণে যেতে পারছিল না।

ম্যাচের প্রথম ৩০ মিনিটে ৬১ শতাংশ বলের দখল রাখলেও একটির বেশি শট নিতে পারেনি আর্জেন্টিনা। সেই শটও অবশ্য লক্ষ্যে ছিল না। উইং এবং মিড দুই দিক থেকেই আক্রমণে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করছিলেন মেসিরা। তবে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাকলাইন ছিল অনড়। শেষ পর্যন্ত ৩৫ মিনিটে মেসিকে এগিয়ে এসেই ভাঙতে হলো অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণদুর্গ। তার প্রথম প্রচেষ্টা অস্ট্রেলিয়ার ডি-বক্স থেকে ফিরে এলেও সে আক্রমণেই ডি-বক্সে ভেতর থেকে দারুণ এক মাটি কামড়ানো শটে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মেসি। অবশেষ পাওয়া গেল কাক্সিক্ষত গোলের দেখা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নক আউটে গোল পেলেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টাইন জাদুকরের গোলেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ৩৫ মিনিটে লিড নিয়েছে আর্জেন্টিনা। এর আগে বিশ্বকাপে মেসি ৮ গোল করলেও তার ১টিও নক আউট পর্বে ছিল না। সব কটিই করেছেন বিশ্বকাপের গ্রæপ পর্বে। তবে বিশ্বকাপের নক আউটে গোল না পেলেও সহায়তা করেছিলেন ৪টিতে। এই ১ গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। বিরতির পরও জমে ওঠে লড়াই। পিছিয়ে পড়া অস্ট্রেলিয়া প্রথমার্ধের কৌশল ধরে রেখে আক্রমণে গিয়ে সুযোগ তৈরির চেষ্টা করে। আর্জেন্টিনাও বল পেলে উঠে আসছিল ওপরে। এর মাঝে মেসি ডি-বক্সের ভেতর থেকে আবার শট নিয়েছিলেন, তবে তাতে গোল আসেনি। একটু পর আর্জেন্টাইন রক্ষণের ভুলে আরেকটু হলে সমতা প্রায় ফিরিয়েই ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। যদিও শেষ পর্যন্ত দলকে রক্ষা করেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। আর্জেন্টিনার রক্ষণের ভুল অস্ট্রেলিয়া কাজে লাগাতে না পারলেও অস্ট্রেলিয়ার ভুল ঠিকই কাজে লাগিয়ে জোড়া গোলের লিড নেয় আর্জেন্টিনা। ব্যাক পাসে অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষক বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হলেও এগিয়ে বল জালে জড়ান হুলিয়ান আলভারেজ। ৭৭ মিনিটে ক্রেগ গুডউইনের ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেয়া ভলি এনজো ফার্নান্দেজের গায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ালে ব্যবধান কমায় অস্ট্রেলিয়া। একটু পর অস্ট্রেলিয়ার আরেকটি দারুণ সুযোগ অল্পের জন্য জালের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। শেষ দিকে দুই দলই দারুণ সব সুযোগ পেয়েছিল। তবে মিসের মহড়ায় কেউ আর গোল পায়নি। এবার কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে এবার নিয়ে ৬ বার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা নেদারল্যান্ডস। তবে সেই বিষয় নিয়ে ভাবছে না আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কলোনি।

অন্যদিকে, নক আউটের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে ৩-১ গোলে হেরে কাতার বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ফুটবল বিশ্বকাপে আবারও কাছাকাছি গিয়ে ব্যর্থ হয় যুক্তরাষ্ট্র। গোল না পেলেও ম্যাচের প্রথম কয়েক মিনিট বেশ দাপট দেখিয়েছে মার্কিনিরা। তবে স্রোতের বিপরীতে ম্যাচের ১০ মিনিটে উল্টো গোল করে এগিয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। দুর্দান্ত এক আক্রমণে ডামফ্রিসের কাছ থেকে ডি-বক্সের ফাঁকা জায়গায় বল পেয়ে লক্ষ্যভেদ করেন মেম্ফিস ডিপাই। আক্রমণ তৈরি থেকে বল জালে জড়ানো পর্যন্ত ডাচ খেলোয়াড়রা ২০টি পাস সম্পন্ন করেন। ১৯৬৬ বিশ্বকাপ থেকে হিসাব রাখার পর এটিই বিশ্বকাপে ডাচদের সবচেয়ে বেশি পাসের গোল। পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েনি যুক্তরাষ্ট্র। তারা চেষ্টা করে ডাচ রক্ষণকে চাপ ফেলে সমতায় ফিরতে। তবে পাল্টা আক্রমণে নেদারল্যান্ডসও বের করে নিচ্ছিল ফাঁকা জায়গা। ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল তাদের সামনেও। ১৭ মিনিটে ডেলি বি্লন্ডের প্রচেষ্টা পোস্টের ওপর দিয়ে যায়। ২১ মিনিটে আরও একবার গোলের সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় তারা। এ সময় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও ধীরে ধীরে কমলা জার্সির দলটি নিয়ে নেয়। যুক্তরাষ্ট্র মাঝ মাঠের দখল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলেও, নিজেদের রক্ষণকে একেবারেই ভালোভাবে সামলাতে পারছিল না। ডিপাই-গাকপো-বি্লন্ডদের প্রতিটি প্রচেষ্টায় কেঁপে কেঁপে উঠছিল মার্কিনিদের রক্ষণ দুর্গ। ৪৩ মিনিটে আক্রমণে গিয়ে ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে নেয়া টিমথি উইয়াহর শট ঠেকিয়ে দেন ডাচ গোলরক্ষক আন্দ্রিস নোপের্ট। তবে যুক্তরাষ্ট্র না পারলেও ভুল করেনি নেদারল্যান্ডস। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ডামফ্রিসের আরেকটি দুর্দান্ত অ্যাসিস্টে গোল করে ডাচদের জোড়া লিড এনে দেন বিøন্ড। বিরতির পর ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। আগ্রাসী ফুটবলে ডাচ রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করছিল তারা। ৪৮ মিনিটে টিম রিমের দারুণ একটি প্রচেষ্টা গোল লাইন থেকে ফেরান কোডি গাপকো।

পাল্টা আক্রমণে গিয়ে তৃতীয় গোলটি প্রায় করেই ফেলেছিল নেদারল্যান্ডস। যদিও ডাচদের সেই প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। একটু পর ডি-বক্সের কাছাকাছি জায়গা থেকে মার্কিন মিডফিল্ডার ওয়েস্টন ম্যাকেনির শট অল্পের জন্য পোস্ট উঁচিয়ে যায়। গোল না পেলেও একের পর আক্রমণে ডাচ রক্ষণকে অস্থির করে তুলছিল যুক্তরাষ্ট্র। নেদারল্যান্ডসের প্রচেষ্টা ছিল রক্ষণ সমালে আক্রমণে যাওয়ার। তেমনই এক আক্রমণ থেকে ৬১ মিনিটে ডিপাইয়ের প্রচেষ্টা হাত ছুঁয়ে বিপন্মুক্ত করেন মার্কিন গোলরক্ষক ম্যাট টার্নার। ৭১ মিনিটে অল্পের জন্য ব্যবধান কমাতে ব্যর্থ হয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে একের পর চাপ তৈরি করে ৭৬ মিনিটে পুলিসিকের পাসে হাজি রাইটের পায়ে লেগে বল জালে জড়ালে এক গোল শোধ করে মার্কিনিরা। আরেক গোল করলেই লড়াইয়ে ফেরার সুযোগ বলে দুই উইং দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বারবার ডাচ রক্ষণের পরীক্ষা নিতে শুরু করে তারা। তবে ৮১ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে সুযোগ পেয়ে দুর্দান্ত এক ভলিতে ডাচদের ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে দিয়ে ম্যাচ এক রকম শেষই করেন ডামফ্রিস। ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন এই ডাচ তারকা। প্রথম দুটি গোলেও অ্যাসিস্ট ছিল তার। এরপর দুই দলই পেয়েছিল গোলের সুযোগ। তবে কেউ আর জালের দেখা না পেলে কমলা উচ্ছ্বাসে ভেসে শেষ আটে চলে যায় নেদারল্যান্ডস।

Leave A Reply

Your email address will not be published.