বর্জনের ঘোষণা দিয়েও সংসদে গেলেন জাপার এমপিরা

0 161

অনলাইন ডেস্কঃ

রওশন এরশাদের স্থলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা না করা হলে সংসদ অধিবেশন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। কিন্তু সোমবার একটু দেরিতে হলেও সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন তারা। স্পিকার এখনো বিরোধীদলীয় নেতার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। এদিকে মসিউর রহমান রাঙ্গার পরিবর্তে কাজী ফিরোজ রশীদকে চিফ হুইপ প্রস্তাব করে জাপার পক্ষ থেকে স্পিকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সভার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে গতকাল রবিবার রাতে জানানো হয়, জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে গেজেট প্রকাশ না করা হলে সংসদে যাবে না জাপা সংসদ সদস্যরা। সোমবার অধিবেশন শুরুর মুহূর্তে একমাত্র মসিউর রহমান রাঙ্গা ছাড়া অধিবেশন কক্ষে অনুপস্থিত ছিলেন জাপা সংসদ সদস্যরা। প্রায় আধা ঘণ্টা পর জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাপা সংসদ সদস্যরা সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। তারা সংসদের সকল কার্যক্রমে অংশ নেন। এমনকি পয়েন্ট অর্ডারে আলোচনার সুযোগ নিয়ে তারা ডেঙ্গু পরিস্থিতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংকট ও অর্থ পাচারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে কথা বলেন। তবে বিরোধীদলীয় নেতা ও চিফ হুইপের বিষয়ে তারা কোনো কথা বলেননি।

বিরোধীদলীয় নেতার প্রশ্নের জাপা এমপিরা কোনো বক্তব্য না রাখলেও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা মো. হারুনুর রশীদ। আইন প্রণয়ন কার্যসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, পত্রিকায় দেখলাম জাতীয় পার্টি সংসদ বর্জন করবে। আবার সংসদে দেখছি তারা আছেন। তারা বিরোধীদলীয় নেতা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সমস্যা কোথায়? সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধিতে কি আছে। এটা আমাদের জানা প্রয়োজন। কিন্তু জানানো হচ্ছে না কেন?

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলকে আমিও কন্ট্রোল করি না, উনিও করেন না। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন, এতে সমস্যাটা কোথায়? আমি তো কোনো সমস্যা দেখি না। বরং তারা জাতীয় স্বার্থে সংসদে আছেন এ জন্য ধন্যবাদ জানাতে পারি। তিনি আরো বলেন, বিএনপি চেয়েছিলো সংসদে হয়তো কোনো একটা সমস্যা হবে, সেটা না হওয়ায় তারা হতাশ হয়েছেন। সে কারণে প্রস্তাবিত আইন নিয়ে কথা না বলে ওই বিষয়ে কথা বলেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সংসদ অধিবেশন শুরুর আগে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের অফিসে বৈঠকে বসেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। পরে একটি প্রতিনিধি দল স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ পদে কাজী ফিরোজ রশীদের নাম প্রস্তাব করে স্পিকারকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। স্পিকার বিধি-বিধান দেখে ওই সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর আশ্বাস দেন। স্পিকারের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তারা সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন বলে জানান জাপার একাধিক সংসদ সদস্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তে আমরা সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছি। অন্যান্য বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত দপ্তর সম্পাদকের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, কাজী ফিরোজ রশীদকে চিফ হুইপ করতে স্পিকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমিও স্পিকারকে পাল্টা চিঠি দিয়েছি, তাদের প্রস্তাব বিধি সম্মত না। বিরোধীদলীয় নেতা না থাকলে কিভাবে সিদ্ধান্ত হয়? যদি তাদের প্রস্তাব গৃহীত হয়, আমি প্রতিবাদ করব। তিনি আরো বলেন, কাজী ফিরোজ রশীদ অনেক সিনিয়র সংসদ সদস্য। তিনি চাইলে আমি এমনিতেই পদ ছেড়ে দিতাম।

রওশন এরশাদের স্থলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের পক্ষ থেকে গত পহেলা সেপ্টেম্বর স্পিকারকে লিখিত ভাবে জানানো হয়। ওই দিন সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জাপার সংসদীয় দলের বৈঠকে দলটির ২৬ জন এমপির মধ্যে ২৩ জন জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা মনোনয়ন দিয়ে গৃহীত প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা সেই প্রস্তাব স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করেন। লিখিত প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে স্পিকার সংবিধান ও কার্যপ্রাণালী বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান। কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। সোমবার নতুন করে মসিউর রহমান রাঙ্গার পরিবর্তে কাজী ফিরোজ রশীদকে চিফ হুইপ করার জন্য স্পিকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.