সেলিম মেডিকেলের বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিল না

0 170

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরে এক নারী ও এক শিশুর মরদেহ ধর্ষণে অভিযুক্ত গ্রেপ্তার সেলিম মেডিকেলের বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিল না। কোনো বেতন ছাড়াই সে ২৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে মেডিকেলের মর্গে কাজ করছে। লাশঘরে আনা মৃত ব্যক্তির স্বজনদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে বছরের পর বছর ধরে সেখানে কাজ করে আসছিল সেলিম।

২০১৭ সালে ভাসমান এক নারীকে ধর্ষণের অপরাধে সেলিমকে গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। ওই মামলায় খালাস পেলেও ফের একই অপরাধে জড়ায় সেলিম। তবে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘জরুরি বিভাগের লাশঘরে রতন মালী নামে একজন দায়িত্ব পালন করেন। সেলিম নামে কেউ সেখানে দায়িত্বে নেই। ওই নামে আমাদের কোনো কর্মচারীও নেই। তবে  মেডিকেলের জরুরি বিভাগের লাশঘরে মৃতদেহ ধর্ষণে অভিযুক্ত থাকার অপরাধে সেলিমকে (৪৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।’

গতকাল বুধবার সকালে লাশঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়েছে পুলিশ।  ২৫ বছরের অধিক সময় ধরে মর্গে কীভাবে সেলিম কাজ করে আসছিল- জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাজীব পালিত বলেন, ‘জরুরি বিভাগের লাশঘরের দায়িত্বে রয়েছেন রতন মালী নামে একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। সেলিমকে আমরা চিনি না।’ ডা. রাজীব বলেন, ‘লাশঘরের পাশেই মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ি। সাধারণত পুলিশ কেস সংক্রান্ত মৃতদেহগুলো ফাঁড়ির পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সুরতহাল করতে দেরি হলে কিংবা মর্গে নেয়ার আগের সময়টুকু জরুরি বিভাগের লাশঘরে পুলিশ হেফাজতে লাশ রাখা হয়।’

পাঁচলাইশ জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. শাহ আলম জানান, ‘যোগদান করেছি বেশী দিন হয়নি। খোঁজ নিয়ে বিষয়টি আমি জানাব।’

জরুরি বিভাগের লাশঘরের দেখভাল করার দায়িত্ব চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী রতন মালীর। ওই লাশঘরে দুই নারীর মৃতদেহ নিয়ে যৌনবিকৃতির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রতন মালী বলেন, ‘জরুরি বিভাগের লাশঘর দেখাশোনা করার দায়িত্ব আমার। তবে  সেলিমের ওই ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।’  রতন আরও বলেন, ‘সেলিম মেডিকেল কর্তৃপক্ষের বেতনভুক্ত কর্মচারী নয়। তবে পঁচিশ বছরের বেশী সময় ধরে মেডিকেলের মর্গে কাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে লাশকাটা ঘরে দায়িত্ব  পালন করেছে। এক নারীকে ধর্ষণের অপরাধে ২০১৭ সালে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ৫/৬ মাস পর জামিনে বের হয়ে জরুরি বিভাগের লাশঘরে কাজ করতো সে।’ বেতনভুক্ত না হয়ে কীভাবে চাকরি করতো, জানতে চাইলে রতন মালী বলেন, ‘সে কোনো বেতন পেতো না। লাশঘরে আসা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলতো।’ লাশঘরটি গতকাল বুধবার সকালে পুলিশ তালা লাগিয়ে দিয়েছে বলে জানান রতন।

২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট চমেক হাসপাতালের মর্গের পেছনে ভাসমান এক নারীকে ধর্ষণের অপরাধে চমেক হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় সাজু দাশ, ডোমের সহকারী সেলিম ও মেডিকেলের সাবেক এক কর্মচারীর ছেলে সেকান্দর নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তার সাজু দাশ সেই সময় আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছিল, ‘১৫ আগস্ট রাত আনুমানিক দশটায় মেডিকেলের সামনে পানের দোকানের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। সেখানেই  মেয়েটিকে দেখতে পাই। তার সাথে কথা বলি। মেয়েটি বললো সারাদিন কিছু খায়নি। তাকে ভাত খাওয়ানোর কথা বলে কাছেই ঝাল বিতানে নিয়ে যাই। খাওয়া দাওয়ার পর মেয়েটিকে লাশঘরের কাছে অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যাই। সেখানে সেকান্দর মেয়েটির সাথে আমাকে দেখতে পায়। আমাকে মারধর করে সে (সেকান্দার) মেয়েটিকে নিয়ে পাশেই একটি রুমের ভেতরে যায়। এরমধ্যে সেলিমকেও ফোন দেয়। মেয়েটিকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথা বলে তারা আমার কাছ থেকে ৯ শ’ টাকা আদায় করে  নেয়। দুজনে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। প্রথমে সেকান্দর মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। মেয়েটি পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলে সেলিম তার চুলের মুঠি ধরে আবারো রুমের ভেতরে নিয়ে  ধর্ষণ করে।’ ২০১৮ সালে ওই মামলার রায়ে সাজু দাশকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয় আদালত। এছাড়া সেলিম ও সেকান্দরকে খালাস দেয়া হয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.