‘ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২১-২০২২’-এর গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

0 238

ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২১-২০২২’-এর গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: দেশী টুয়েন্টিফোর

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবসময় বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে হবে, সম্মানের সঙ্গে, মর্যাদার সঙ্গে। সেই মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। কারও কাছে হাত পেতে নয়, আমাদের যা সম্পদ আছে তা দিয়েই নিজেদেরকে বিশ্বে মর্যাদাশীল করে গড়ে তুলেছি, আরও গড়ে তুলব, সামনে এগিয়ে যাবে।’

কারও কাছে হাত পেতে নয়, দেশের সীমিত সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে দেশকে বিশ্ব দরবারে আরও মর্যাদাশীল আসনে নিয়ে যেতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিবেদিত প্রাণ হয়ে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা যাতে কেউ থামিয়ে দিতে না পারে, সেভাবে এগিয়ে যেতে হবে।’

ঢাকার মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে বুধবার সকালে ‘ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২১-২০২২’-এর গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনিতে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবসময় বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে হবে, সম্মানের সঙ্গে, মর্যাদার সঙ্গে। সেই মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। কারও কাছে হাত পেতে নয়, আমাদের যা সম্পদ আছে তা দিয়েই নিজেদেরকে বিশ্বে মর্যাদাশীল করে গড়ে তুলেছি, আরও গড়ে তুলব, সামনে এগিয়ে যাবে।’

বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘একটি কথা সবাইকে বলতে চাই, একটা সময় বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক কথা ছিল। তবে এখনও কিছু কিছু লোক আছে, বাংলাদেশ সম্পর্কে বদনাম করতে পছন্দ করে। কিন্তু আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ফলে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষা, দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে আমরা যে দক্ষতা দেখিয়েছি, তার ফলে আজকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল হয়েছে।’

স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ঠিক ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভের পর যে সম্মান আন্তর্জাতিকভাবে পেয়েছিলাম, ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর যে সম্মান আমরা হারিয়েছিলাম, আজ আবার সেই সম্মান আমরা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এখন আর বাংলাদেশকে কেউ অবহেলা করতে পারে না।’

বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্ব দরবারে মর্যাদা পেয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মর্যাদা ধরে রাখতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চাই। আর ২০৭১ সালের আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষ আমরা উদযাপন করব।

‘আমার একটাই আবেদন থাকবে, আমাদের নতুন ট্রেনিংপ্রাপ্ত অফিসার যারা, ৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিক হিসেবে কাজ করতে হবে। সবসময় মাথা উঁচু করে চলতে হবে। সবসময় দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে। দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ হতে হবে। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন দেশ, বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা আর কখনও কেউ থামিয়ে দিতে পারবে না- সেভাবেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে।’

যুদ্ধ চাই না, আঘাত এলে চুপ থাকব না

বাংলাদেশ কারও সঙ্গে কোনো যুদ্ধ জড়াতে চায় না, তবে আঘাত এলে প্রতিরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’-এই পররাষ্ট্রনীতি জাতির পিতা আমাদের দিয়ে গেছেন। আমরা সেই নীতি মেনে চলি। আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করব না। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এলে আমরা চুপ করে থাকব না। সেটা নিশ্চয় আমরা প্রতিরোধ করব বা প্রতিবাদ করব। সেভাবেই আমরা আমাদের সশস্ত্রবাহিনীকে গড়ে তুলছি।’

বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর বাংলাদেশের বিশ্বাস রয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঐক্য উন্নয়নে বাংলাদেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা সমবসময় যেখানে বিপন্ন মানবতা, আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়েছি। আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি।’

মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের সীমান্ত খুলে দেশের আশ্রয় দেয়ার উদাহরণটি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা করে যাচ্ছি, যাতে তারা স্বদেশ ভূমিতে ফিরতে পারে। কাজেই বাংলাদেশ আজকে সারা বিশ্বের কাছে আমাদের নীতিমালার কারণে আমরা একটা সম্মানজনক অবস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছি।’

স্বল্পোন্নত দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক অগ্রগতির মানদণ্ডে বিশ্বের প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে একটি। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশের নীচে নামিয়ে এনেছি এবং মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি।’

ডিএসসিএসসি কোর্স

সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর মোট ১২৮টি কোর্স পরিচালনা করেছে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ। ৫ হাজার ৬৮৬ জনকে পেয়েছেন ডিগ্রি।

বাংলাদশে ছাড়াও ৪৩টি দেশের ১ হাজার ২৫৫ জন অফিসার এই কলেজ থেকে ডিগ্রি নিয়ে নিজ নিজ দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এবারও ১৮টি দেশের ৪৭ জন বিদেশি কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পুলিশের ৩ জন কর্মকর্তাসহ মোট ২৫১ জন পিএসসি ডিগ্রি পেয়েছেন।

গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সমর বিজ্ঞান এবং সাম্প্রতিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের ওপর উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছেন। আমার বিশ্বাস, এসব প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন এবং যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে।’

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যেকোনো জাতীয় প্রয়োজনে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করে থাকেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের অবকাঠামো উন্নয়নেও যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। আমরা আবারও সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে গৌরবের স্থানটি ধরে রাখতে পেরেছি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য, আমি চাই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হবে। আমি কিন্তু সবার পদবি পরিবর্তন করা থেকে শুরু করে অনেক কাজ করে দিয়েছি। যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমানতালে আমাদের প্রতিটি সদস্য চলতে পারে।’

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টে আবারও সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখি হাসিনা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.