বিশ্বব্যাপী করোনার রেকর্ডে প্রধান ভ্যারিয়েন্ট হয়ে উঠছে ওমিক্রন

0 230

দেশে দেশে কোভিডের প্রধান ভ্যারিয়েন্ট হয়ে উঠছে ওমিক্রন। ব্রিটেন ও পর্তুগালের পর ফ্রান্সেও ওমিক্রন এখন ভাইরাসটির সবথেকে প্রভাবশালী ভ্যারিয়েন্ট। এরইমধ্যে বিশ্বে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে গতকাল শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর)।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, এদিন সব রেকর্ড ভেঙে ১৮ লাখ ৮৬ হাজার জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই পশ্চিম ইউরোপ ও আমেরিকায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ। শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রন যেভাবে বজ্রের বেগে ছড়িয়ে পড়ছে তা কখনোই দেখা যায়নি।

জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের শীর্ষ গবেষক ড. জেমস ফিলিপস মার্কিন বলেন, এখন আমরা যা দেখছি তা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। এমনকি কোভিডের সবথেকে ভয়াবহ সময়েও না।

গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৮০ হাজার জনের কোভিড শনাক্ত হয়। এর মধ্যদিয়ে টানা দু’দিন রেকর্ড সংক্রমণ শনাক্ত হলো দেশটিতে। বুধবারও সব রেকর্ড ভেঙে ৪ লাখ ৮৮ হাজার জনের কোভিড শনাক্ত হয়। এই সংখ্যা গত বছরের শীতকালের তুলনায় দুইগুণ। তবে আশার কথা হচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর হারের ক্ষেত্রে এ রকম নাটকীয় বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে না।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিডের অন্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় গুরুতর অসুস্থ করার ক্ষমতা ওমিক্রনের কম বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। সংক্রমণ যখন বেড়েই চলেছে তখন গত দুই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর হার কমেছে ৫ শতাংশ। তারপরও দেশটিতে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২২১ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডে। অপরদিকে হাসপাতালে প্রতিদিন নতুন করে ভর্তি হচ্ছেন ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতেও ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে কোভিড পরিস্থিতি। ফ্রান্সে গত কয়েকদিন ধরেই রেকর্ড ভাঙছে দৈনিক সংক্রমণের। তবে দেশটির পাবলিক হেলথ এজেন্সি জানিয়েছে, দেশটির কোভিড আক্রান্তদের বেশিরভাগই এখন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত।

এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, ফ্রান্সের কোভিড রোগীদের ৬২.৪ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। গত সপ্তাহে এ হার ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ। সম্প্রতি দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণ ২ লাখ ছাড়িয়েছে। এর জন্য এখন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকেই দায়ী করা হচ্ছে।

এদিকে, কানাডার কুইবেক প্রদেশে কোভিড সংক্রমণ থামাতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এটি দেশটির দ্বিতীয় জনবহুল প্রদেশ। দেশটিতে কোভিড সংক্রমণ ক্রমশ বাড়তে থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।  কুইবেক সরকারের প্রধান ফ্রান্সইস লিগল্ট ঘোষণা দেন, রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে। এটি শুরু হচ্ছে নতুন বছরের প্রথম দিনেই।

কোভিডের কারণে জারি করা কারফিউ তুলে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটিতে কোভিডের চতুর্থ ঢেউ চলছে। তবে বর্তমানে এই সংক্রমণ পিক ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

দেশটির সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে কোভিডের যে নতুন ঢেউ আঘাত হেনেছে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এর আগেও দেশটি মহামারির ধরন বুঝে নানা সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এদিকে, ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানাচ্ছে সমগ্র বিশ্ব। তবে ওমিক্রন আতঙ্কে এবারো নববর্ষের আয়োজনে নানা বাধানিষেধ জারি হয়েছে দেশে দেশে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে চীন। দেশটিতেও সম্প্রতি কোভিডের উদ্বেগজনক সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। ফলে লকডাউনে রয়েছে জিয়ানসহ বেশ কয়েকটি শহর। সেসব শহরে বাতিল করা হয়েছে নববর্ষের সকল আয়োজন।

গত বৃহস্পতিবার চীনে স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত ১৬৬ কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৬১ জনই জিয়ানের বাসিন্দা। এ বছর চীনের মধ্যে সবথেকে বড় কোভিড সংক্রমণ দেখেছে এই শহরটি। গত ৯ই ডিসেম্বর থেকে ১২০০ জনেরও বেশি মানুষের কোভিড শনাক্ত হয়েছে সেখানে।

তবে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়াতে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সেখানে নানা আয়োজন করা হয়েছে। ওমিক্রন ঢেউয়ে অস্ট্রেলিয়ার সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শহর সিডনি। সেখানে কর্তৃপক্ষ মানুষদের উৎসবে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অথচ সেখানে রেকর্ড কোভিড সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে শহরটিতে নতুন বছরকে বরণ করে নেবে। সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন স্থানে আয়োজন চলছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন দেশের সকল মানুষকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দেশটিতে রেকর্ড ২১ হাজার ১৫১ জনের কোভিড শনাক্ত হয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.