করোনাভাইরাসে ‘সর্বোচ্চ’ ঝুঁকির চট্টগ্রামে প্রস্তুতি ‘সীমার মধ্যে’

0 86


বন্দর নগরী হিসেবে নভেল করোনাভাইরাসের ‘সর্বোচ্চ ঝুঁকি’র মধ্যে চট্টগ্রাম থাকলেও কভিড-১৯ রোগী পাওয়া গেলে যে চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা ‘সীমিত সীমার মধ্যে’।

করোনাভাইরাস শনাক্ত করার কোনো কিটসও বন্দর নগরীতে এখনও নেই, যা ‘নীতিগত সিদ্ধান্তের’ কারণে আসেনি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি।

কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে বিকল্প সরঞ্জাম ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
সোমবার বিকালে নিজের কার্যালয় হাম-রুবেলা টিকাদান ক্যাম্পেইন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে করোনাভাইরাস মোকাবেলার সার্বিক প্রস্তুতির চিত্র তুলে ধরেন সিভিল সার্জন।

ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, “চট্টগ্রাম জেলা সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে। কারণ এখানে বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর আছে।

“আমাদের প্রথম কাজ এন্ট্রি পয়েন্টে আক্রান্ত কেউ থাকলে চিহ্নিত করতে পারা। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি থার্মাল স্ক্যানার থাকলেও বন্দরে এখনও হ্যান্ড হেল্ড ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে। তবে দুটোই সমান উপযোগী।”

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আটজন কভিড-১৯ রোগী ধরা পড়েছে। দেশে ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশ থাকা যে কোনো ব্যক্তিকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।

সোমবার সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় মোট ২৯ জন ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ আছেন বলে জানান সিভিল সার্জন।

হোম কোয়ারেন্টিনে যারা আছেন তারা ঠিকমত বিচ্ছিন্ন থাকার নির্দেশনা মানছেন কি না- প্রশ্ন করা হলে ডা. ফজলে রাব্বি বলেন, “স্বাস্থ্য বিভাগের একার পক্ষে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমরা চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যবস্থা করব। স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে দৃষ্টি রাখছে।”

প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দয়া করে উন্নত দেশের সাথে আমাদের প্রস্তুতির তুলনা করবেন না। আমাদের যা কিছু আছে শেষবিন্দু দিয়ে আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। তবে সব প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি।”

করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কতটুকু আছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে রোগী দেখার সময় চিকিৎসক শুধু গ্লাভস ও মাস্ক পরলেই হবে।

“শুধু আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে যেতেই ওই পোশাক (এপ্রন সদৃশ) পড়তে হবে। আউটডোরে রোগী দেখতে ওরকম পোশাক পরবেন না।”

“সরঞ্জাম আমাদের পর্যাপ্ত আছে। আমরা একটা চেইন তৈরি করতে পেরেছি। কিছুদিন পরপর সরঞ্জাম পাব। সঙ্কট হবে না। এছাড়া যদি সেই বিশেষ এপ্রোন না থাকে, তাহলে দুটো সাধারণ এপ্রোন একসাথে অথবা রেইনকোটও ব্যবহার করা যাবে। কারও কাছে মাস্ক না থাকলে তিন লেয়ারের কাপড় দিয়ে মাস্ক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারবেন। হাতে নরমাল গ্লাভস পড়লেই চলবে,” বলেন তিনি।

নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্তদের শনাক্তের কিটস চট্টগ্রামে আছে কি না- এ প্রশ্নে ডা. ফজলে রাব্বি বলেন, “কারও প্রাথমিক লক্ষণ দেখে যদি করোনা আ্রকান্ত মনে হয়, তবে আইইডিসিআর থেকে লোক এসে স্যাম্পল নিয়ে যাবেন ঢাকায়। সেখানে পরীক্ষার তিন ঘণ্টা পরই ফল জানা যাবে। “এধরণের রোগের ক্ষেত্রে কিট বাইরে চলে এলে সেগুলো নিয়ে আবার ব্যবসা শুরু হয়ে যায়। যেমনটা ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে দেখা গেছে।

“নীতিগত সিদ্ধান্ত যদি হয় কিট ঢাকার বাইরে যাবে। তাহলে চট্টগ্রাম বিআইটিআইডি এবং কক্সবাজারের বিষয়টি আলোচনায় আছে। এখানে আগে আসবে। সংক্রমণ বাড়তে থাকলে অবশ্যই কিট ঢাকার বাইরে আসবে।”

বিদেশ ফেরতদের পরিবারকে সহযোগিতার আহ্বান:
সিভিল সার্জন ফজলে রাব্বি বলেন, “চট্টগ্রামে ইতালি ফেরত যাত্রী বেশি। সেখান থেকে কেউ এলে বিমানবন্দর থেকেই আমাদের তালিকা দেওয়া হয় দ্রুত। সেটা স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ডিজিএফআইও মনিটর করছে।

“সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিদেশ ফেরত প্রবাসী ব্যক্তি যেন একটি ঘরে থাকেন, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে প্রতিবেশীরা তাদের শত্রু ভাববেন না। উনারা বৈশ্বিক একটা পরিস্থিতির শিকার। তারা অনেক কষ্ট করে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিদেশে গেছেন। তাদের রেমিটেন্সে দেশের অনেক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের পরিবার যেন সব সহযোগিতা পায়। প্রয়োজনে তাদের ঘরের বাজারও প্রতিবেশিরা করে দিবেন। তাদের সাথে যোগাযোগ রাখবেন মোবাইল ফোনে। তাদের সহযোগিতা করা সবার দায়িত্ব।”

Leave A Reply

Your email address will not be published.