সেই আঁখিকে নিয়ে যা বললেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক

0 309

অনলাইন ডেস্ক:

সেন্ট্রাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় গুরুতর অসুস্থ প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কথা জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোখলেসুর রহমান।

সোমবার (১৯ জুন) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর সাংবাদিকদের তিনি জানান, পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আঁখির মরদেহ থেকে নমুনা রাখা হয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট এলে পূর্ণ প্রতিবেদন দেয়া হবে।

এদিন ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসদের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ ওঠা মাহবুবা রহমান আঁখি এবং তার নবজাতক সন্তানের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। দুপুর দুইটা থেকে চারটা পর্যন্ত ময়নাতদন্ত করেন অধ্যাপক ডা. মোখলেসুর। পরে আঁখির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে। তবে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য মৃতদেহ থেকে বিভিন্ন অর্গান রাখা হয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট আসলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

এদিকে নিহত মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতক ছেলে সন্তানকে কুমিল্লার লাকসামে বাবার বাড়ির পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে। সোমবার (১৯ জুন) রাতে জেলার লাকসাম উপজেলার গাইনের ডহরা গ্রামে স্থানীয় মাদরাসা মাঠে একসঙ্গে দুটি জানাজার নামাজ শেষে মা ও শিশুর মরদেহ দাফন করা  হয়।

এর আগে রাত সাড়ে ৯টায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মরহুম মাহবুবুর রহমানের বাড়িতে আঁখি ও নবজাতকের মরদেহ আনা হলে শোকাবহ পরিবেশের তৈরি হয়। এ সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। নিহত আঁখি ও তার শিশু সন্তানকে এক নজর দেখার জন্য আত্মীয় স্বজন ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে শত শত নারী পুরুষ ওই বাড়িতে ভিড় জমান। এদিকে রাত সাড়ে ১০টায় জানাজা নামাজ শেষে তাদের দাফন করা হয়। জানাজার নামাজে আগে বক্তব্য রাখেন তার জেঠা শফিকুর রহমান ও তার স্বামী  ইয়াকুব আলী সুমন।

এর আগে ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী আঁখি অস্ত্রোপচার ছাড়া সন্তানের জন্ম দেয়ার আশায় গিয়েছিলেন ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে। কিন্তু ভুল চিকিৎসায় সদ্যোজাত সন্তান মারা যাওয়ার সাত দিনের মাথায় মৃত্যু হয় মা মাহবুবা রহমান আঁখির। রোববার (১৮ জুন) রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে দুপুর ২টার পর তার মৃত্যু হয়।

কুমিল্লার মাহবুবা রহমান আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে গত ৯ জুন সি-সেকশন সার্জারির সময় নবজাতকের মৃত্যু হয় এবং মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। এরপর আঁখি ১১ জুন থেকে বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা ও মিথ্যাচারের অভিযোগ এনে গত ১৪ জুন ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করেন।

অভিযোগে বলা হয়, রোগী ও তার পরিবারকে সার্জারির আগে বলা হয়েছিল যে সংযুক্তা সাহা আঁখির অপারেশন করবেন। তবে হাসপাতালে তাকে ওই চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি করা হলেও ডা. সংযুক্তা সাহা দেশেই ছিলেন না। অন্য চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা ব্যর্থ হলে তখন অস্ত্রোপচার করে বাচ্চা বের করা হয়। পরদিন মারা যায় শিশুটি। এ ঘটনায় ঢাকার একটি আদালত হাসপাতালটির দুই চিকিৎসককে কারাগারে পাঠিয়েছে। তবে মূল অভিযুক্তকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এদিকে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও অস্ত্রোপচারের কক্ষ মানসম্পন্ন নয় বলে অধিদপ্তর এ নির্দেশ দিয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.