মাছ, মাংস, সবজি রাজশাহীতে রোজার আগেই নেই কোনটিতে স্বস্তি 

0 151

অনলাইন ডেস্ক:

রাজশাহী নগরীর তেরখাদিয়া এলাকায় বসবাস করেন মাছ ব্যবসায়ী দয়াল। আগে প্রতিদিন আধা মণ মাছ ভ্যানগাড়িতে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে আয় হতো ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা। বছর খানেক আগেও সে টাকায় ঘর ভাড়া দিয়ে ৫ জনের পরিবার চালানো যেত বেশ ভালো। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন।

এ ব্যবসায়ী জানান, মাছের দাম বৃদ্ধির কারণে চাহিদা কমেছে। এখন প্রতিদিন মাছ বিক্রির জন্য আনছেন ১০ থেকে ১২ কেজি তাও বেশিরভাগ সময়ে সিলভার কার্পই নিয়ে আসেন। তার দামও এখন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। ফলে আয় যেমন কমেছে তেমনি বাজারে নিত্য পণ্যের দামও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে খাবি খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

নগরীর সিটি হাট এলাকার দিন মজুর রাজু মিয়া। থাকার ঘরটা নিজেদের হলেও ৬ জনের সংসারে আয় করেন মাত্র দুইজন। সব মিলিয়ে মাসে আয় ২০ হাজার টাকার মতো। রাজু মিয়া জানান, সংসার চালানোর জন্য সপ্তাহে যে চাল ডাল সহ কাঁচা বাজার লাগে তাতে আর সংসার চালানো যাচ্ছেনা। যদিও চাল আটা কিনতে ঘরের নারীরা প্রতি সপ্তাহে লাইন দিচ্ছেন পাড়ার ওএমএস দোকানে। তাতেও যেন কিছু থেকে কিছু হচ্ছে না। তিনি বলেন, বাজারের এ বাড়তি দামের সীমানা শেষ কোথায়? এভাবে চলতে থাকলে রমজান মাসে না খেয়ে থাকতে হবে।

এতো গেলো নিম্নবিত্তদের চিত্র। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আতিকুর রহমান। মাত্র তিনজনের সংসার। বেতনও খুব একটা খারাপ নয়। কিন্তু তার চিত্রটাও অন্যরকম হয়নি। আতিকুর রহমান জানান, গরুর মাংস আগেই খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। মাসে ৪/৫ বার ব্রয়লার মুরগি খেতেন, সেটিও বন্ধ করেছেন দাম বাড়ার পর। সবশেষ তিনি মুরগি কিনেছেন ১৫০ টাকা কেজিতে।

এখন পরিবারের আমিষের চাহিদা মেটাতে আস্থা রেখেছেন শুধুমাত্র ডিমের ওপর। সেটার হালিও  লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বর্তমানে রাজশাহীতে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৬ টাকায়। সবজি খাবারও জো নেই। তার মতে বাজারে ৩০/৩৫ টাকার নিচে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছেনা।

বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের দেয়া তথ্য মতে, রমজান মাস শুরুর আগেই দেশের সব বাজারেই দফায় দফায় বেড়েছে ভোজ্যতেল, মাছ, মুরগি, চাল আটা, তেল, চিনি, ডিমসহ সব ধরনের পণ্যের দাম।

আমদানি বন্ধ ঘোষণায় পেঁয়াজের ভরা মৌসুমেও বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দাম এখন কেজি প্রতি পাঁচ টাকা বেড়ে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আদা কদিন আগেও ১০০ টাকায় পাওয়া গেছে সেটির দাম বেড়ে হয়েছে ১২৫ টাকা। কাঁচা রসুন পাওয়া যেতো ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় তার দাম বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা। এদিকে সব ধরনের মসলার বাজারে বাড়তি দামে কমে গেছে ক্রেতা।

নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুরগির বাজারে ব্রয়লার পাঁচ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৫০ টাকা, সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা। গরুর মাংস ৭০০ টাকা আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।  মাছের বাজারে সব ধরনের মাছ কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ১০০ টাকা।

নগরীর সাহেব বাজার এলাকার মুদি দোকানি অঞ্জু ঘোষ জানান, বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। পরিবেশকদের বলে দিয়েছে পরে এটির সরবরাহ ঠিক করে দেয়া হবে। ডিলারেরও একই কথা বলছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

এদিকে রাজশাহী বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে প্রতি সপ্তাহে নগরীর বাজারগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। নানা অভিযোগে ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করা হচ্ছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন বলেন, মজুতদার ও ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার লোভ পরিহার না করা ছাড়া এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এছাড়া সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার তদারকি ব্যবস্থা আরও সক্রিয় না করা গেলে অবস্থা আরও সংকটপূর্ণ হবে।

তিনি আরও বলেন, রমজান মাসে বিশ্বের অন্যান্য দেশে যখন পণ্যের দাম কমায় আমাদের দেশে তখন মুনাফা লোভীরা আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই ক্রেতা বা ভোক্তাদেরও সাবধান হওয়া উচিত।

Leave A Reply

Your email address will not be published.