২০৩৬ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতি হবে বাংলাদেশ

0 207

২০৩৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতি হবে বলে সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) গত রোববার তাদের বার্ষিক ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লীগ টেবিল’ (ওয়েল্ট ২০২২) প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর মধ্যে অবস্থান করছে। ২০৩৬ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হবে বাংলাদেশ।

সিইবিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষমতা, ক্রমবর্ধমান আরএমজি (তৈরি পোশাক) চাহিদা ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে ১৯১ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এই অবস্থান অর্জন করবে।

সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) রোববার তাদের বার্ষিক ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লীগ টেবিল’ (ওয়েল্ট ২০২২) প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর মধ্যে রয়েছে।

বর্তমানে দেশের অবস্থান ৪২ তম; ২০২২ সালে ৪১ তম স্থানে থাকার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা ২০২৬ সাল নাগাদ গিয়ে পৌঁছাবে ৩৪ তম স্থানে এবং ২০৩৬ সালে পৌঁছাবে ২৪ তম অবস্থানে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি পরবর্তী দশকে ব্যাপক অর্থনৈতিক বিকাশের ইঙ্গিত দেয়।

এর আগে ২০০৬, ২০১১ ও ২০২৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ৫৮ তম, ৫৯ তম ও ৪৬ তম। এই অবস্থান অর্থনৈতিক কার্যক্ষমতা ও প্রবৃদ্ধিতে ধারাবাহিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নির্দেশ করে।

২০২১ সালের হিসেবে, বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন।

প্রতিবেদনে জিডিপি অনুপাতের তুলনায় কম ঋণের পরিমাণের পাশাপাশি, ২০২১ অর্থবছরে   ৫.৯ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতি পরিচালনার ব্যাপারটিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করা হয়েছে।

অন্যদিকে, কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার কম দেখা গেছে। এছাড়া, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ অন্তত এক ডোজ করে টিকা পেয়েছে। এতে আরও বলা হয়, দেশের টিকাদান অভিযান বিশ্বমানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল।

তৈরি পোশাকের (আরএমজি) ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাহিদা ছাড়াও, অন্যান্য রপ্তানি থেকে প্রচুর পরিমাণে আয় নিশ্চিত হয়ে থাকে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সেইসঙ্গে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতকে দক্ষ কর্মীদের মাধ্যমে পরিচালনার কারণে দেশের টেলিযোগাযোগ শিল্পে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে।

গত কয়েক বছরে চীন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। দেশের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান ও ভারত মহাসাগরের মাধ্যমে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহজ প্রবেশাধিকারের কারণে চীন থেকে এই বিনিয়োগ আসছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনভাইরাস মহামারি সত্ত্বেও, শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি পুনরুদ্ধারের কারণে ২০২০ সালে দেশের অর্থনীতি বৃদ্ধি পেয়েছে ৩.৫ শতাংশ। নিঃসন্দেহে দেশের জন্য এটি একটি বড় অর্জন।

সিইবিআর আশা করছে এ বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৬ শতাংশ।

তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধ্যম থেকে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনে অর্থনীতি একাধিক বাধার সম্মুখীন হতে পারে। কারণ তৈরি পোশাকের বাইরে বাংলাদেশ রপ্তানিতে এখনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈচিত্র্য আনতে পারেনি।

২০০৯ সালে প্রতিবেদনের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে, ভারত দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। ২০৩১ সালের মধ্যে দেশটি তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে সিইবিআর।

প্রতিবেদনে অনুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে এই অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং স্থির মূল্যে জিডিপি আকার ৮৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত উন্নতির এই ধারা বজায় থাকবে দেশে। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডির পরিমাণ ৩২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান (বিশ্বে ৪৬তম); এরপরে রয়েছে যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা (৬৯তম), নেপাল (৯৯তম), মালদ্বীপ (১৫৪তম) ও ভুটান (১৬৪তম)।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১ম), চীন (দ্বিতীয়), ও জাপান (৩য়) বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ তিন অর্থনীতির দেশ। প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, চীন আগামী দশকের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.