একে একে বন্ধ হচ্ছে সব

0 289

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ লাগামহীন হারে বাড়ছে। প্রথমটির তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউ তুলনামূলক ভয়াবহরূপে আবির্ভূত হয়েছে। এ কারণে সরকারকে একে একে বন্ধ করতে হচ্ছে সবকিছু।

ইতোমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানের পর্যটন কেন্দ্র। বাতিল করা হচ্ছে হোটেল-মোটেলে আগাম নেয়া বুকিং। পাশাপাশি নতুন বুকিংও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া কোথাও সন্ধ্যার পর জনগণের চলাচল সীমিত করা হয়েছে।

আবার কোথাও ওষুধ এবং কাঁচামালের দোকান ও বাজার বাদে অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসব নির্দেশনার প্রায় সবই স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে এসেছে।

বৃহস্পতিবার থেকে এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও আছে।

এর আগে গত বছর ২৬ মার্চ থেকে দেশের পর্যটন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রথমে লকডাউনের আওতায় ছিল। পরে লকডাউন উঠে গেলেও অনেক প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫ মাস বন্ধ ছিল।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১৮ দফা সংবলিত পরিপত্র জারি করে।

মূলত এরপরই উল্লিখিত সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ২ এপ্রিল (শুক্রবার) জাতীয় চিড়িয়াখানা এবং রংপুরে চিড়িয়াখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগের রাতে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।

১ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়া বন্ধ করা হয়। অন্যদিকে অনেকটা লকডাউনের পর্যায়ে চলে গেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম।

শুক্রবার থেকে চট্টগ্রামে সন্ধ্যা ৬টার পর ওষুধের দোকান ও কাঁচা বাজার ছাড়া আর সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করে জেলা প্রশাসন।

এদিন সিলেট বিভাগের সব পর্যটন কেন্দ্রে বাইরের পর্যটক নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। একইভাবে বন বিভাগ ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে বৃহস্পতিবার ইউরোপসহ ১২ দেশের যাত্রীদের দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন বন্ধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

একই কারণে এর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি একবারে পৌনে ২ মাস বাড়ানো হয়। একইভাবে তিন পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পর্যটন কেন্দ্র এবং হোটেল-মোটেলও সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণার খবর পাওয়া গেছে। বন্ধের এ আওতা আরও বাড়তে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে করোনার এই পরিস্থিতি শুরু হয়। এরপর সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রথমে ১৬ মার্চ ১২ দফা এবং পরে ২৬ মার্চ ২২ ও ১৮ দফা সুপারিশ পাঠায়।

তাতেই হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন কেন্দ্র, মসজিদসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সভা-সমাবেশসহ জমায়েতের ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ ও করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে।

এর মধ্যে যেসব জেলায় সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি সেসব জেলায় উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান বন্ধের নীতি অনুসরণের সুপারিশ করা হয়। আর ১০ শতাংশের নিচে সংক্রমণ এলাকায় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা হয়।

এসব কারণে দেরিতে হলেও বন্ধের এই উদ্যোগ ইতিবাচক বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। শুক্রবারের সর্বশেষ হিসাবে বর্তমানে দেশে গড় সংক্রমণের হার সাড়ে ২৩ শতাংশ। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চট্টগ্রামে সন্ধ্যায়ই সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ : সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার ছাড়া সব শপিং মল, বিপণিবিতান এবং হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে।

শুক্রবার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান এ সিদ্ধান্তের কথা যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সব বিনোদন কেন্দ্র আগামী দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, চট্টগ্রামে উদ্বেগজনক হারে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে সব খাবার হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিং সেন্টার, বিপণি কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হবে।

শুধু ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার খোলা থাকবে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এতদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। রোববার থেকে কঠোর ভূমিকা পালন করা হবে। মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ২০টি টিম।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২ এপ্রিল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানা ও রংপুর চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকবে।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি বলেন, জনসাধারণকে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

কক্সবাজার জেলার সব পর্যটন স্পট বন্ধ ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে কক্সবাজার শহর ও টেকনাফ থেকে ছেড়ে যাওয়া সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে পর্যটকবাহী জাহাজগুলো।

গুটিয়ে ফেলা হয়েছে সৈকতের বালিয়াড়িতে পর্যটকদের বসার জন্য সাজানো সারি সারি কিটকট চেয়ার। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সাগরতীরের সব দোকানপাট।

এছাড়া করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে কক্সবাজার শহর, পর্যটন এলাকাসহ ব্যস্ততম এলাকায় মোবাইল কোর্ট এবং নানা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।

সিলেটে জেলার সব পর্যটন কেন্দ্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আগামী দুই সপ্তাহের জন্য সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক পর্যটক কেন্দ্র, হোটেল-মোটেল বন্ধ থাকবে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এম কাজী এমদাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, সিলেটের পর্যটন-বিনোদন কেন্দ্র, সিনেমা হল, থিয়েটার হলে অন্য জেলার পর্যটক/দর্শনার্থীদের আগমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রায় সারা দেশের পর্যটন কেন্দ্র থেকেই নিষেধাজ্ঞা ও বন্ধের খবর এসেছে। শুক্রবার যুগান্তরের খাগড়াছড়ি, মনপুরা (ভোলা), শেরপুর, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি একই ধরনের তথ্য জানান। বৃহস্পতিবার নিষেধাজ্ঞা জারির পর খাগড়াছড়ি পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে।

এর আগে খাগড়াছড়িতে রাত ১০টার পর জরুরি সেবার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি ও পরিবহণ ছাড়া সাধারণের চলাচলও নিষিদ্ধ করা হয়। একইসঙ্গে সভা-সমাবেশও বন্ধ থাকবে।

অপর দুই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও বান্দরবানেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মনপুরার দখিনা হাওয়া বিচেও উপজেলা প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

পর্যটন কেন্দ্র ও সিনেমা হলসহ জনসমাগম ঘটে এমন জায়গা বন্ধে মাইকিং করছে শেরপুর জেলা প্রশাসন। চুনারুঘাটের সব পর্যটন কেন্দ্রও বন্ধ আছে।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পর্যটন কেন্দ্রে সন্ধ্যা ৭টার পর অবস্থান নিষিদ্ধ। কুয়াকাটা পৌর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থানীয় প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশ মাইকিং করে সব হোটেল-মোটেল বন্ধসহ পর্যটক আগমনে নিষেধাজ্ঞার কথা জানায়।

বুধবার বান্দরবান জেলা প্রশাসন এক গণবিজ্ঞপ্তিতে পাহাড়িদের বর্ষবরণ উৎসবের সব আয়োজনও বাতিল করে।

দ্বিতীয় দফায় ফের ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের দর্শনীয় স্পটগুলোয় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। করোনার সংক্রমণ রোধে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনবিভাগ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বন বিভাগ থেকে পর্যটক পরিবহণ না করার জন্য লঞ্চ-জালিবোটসহ ট্যুর সংশ্লিষ্টদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে। আজ সকাল থেকে বনবিভাগের জারি করা এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

তবে পর্যটকদের যাতায়াত বন্ধ থাকলেও সুন্দরবনের অভ্যন্তরে জেলে-মৌয়ালসহ পেশাজীবীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, হঠাৎ করে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বনের সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনাও জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। তবে পেশাজীবীরা বনে প্রবেশ করতে পারবেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.