সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি

0 149
সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল ছবি।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন নিম্ন আদালতে মামলার জট কমানোর লক্ষ্যে অধস্তন দেওয়ানি আদালত ও অর্থঋণ আদালতে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির আইন কঠোরভাবে অনুসরণ করতে নির্দেশনা জারি করেছে।

মধ্যস্থতা সংশ্লিষ্ট আইনের বিধানাবলী প্রতিপালনে অনীহা বা গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তা সুপ্রিম কোর্টকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৮৯ক ও ৮৯গ ধারার এবং অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ২২ ধারার বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করে দেওয়ানী মোকদ্দমা, অর্থ ঋণ মামলা এবং আপিলসমুহে আবশ্যিকভাবে মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া দ্যা আরবিট্রেশন এ্যাক্ট ২০০১ এর ২২(১) ধারা এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ২১০ ধারাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির যে বিধান রায়েছে তা যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরের স্বাক্ষরে ২১ মার্চ (রবিবার) এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অধস্তন দেওয়ানী আদালত এবং অর্থ ঋণ আদালতসমূহে কোনো মোকদ্দমায় বিবাদী কর্তৃক লিখিত জবাব দাখিলের পর ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৮৯ক ধারা এবং অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ২২ ধারার বিধানমতে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে মধ্যস্থতার উদ্যোগ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৮৯গ ধারায় উক্ত কার্যবিধির ৬০ আদেশের অধীনে মূল মামলার ডিক্রির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আপিলসমূহ নিস্পত্তির ক্ষেত্রেও মধ্যস্থতার পন্থা অবলম্বনের নির্দেশনা রয়েছে।

এছাড়াও দ্যা আরবিট্রেশন অ্যাক্ট ২০০১ এর ২২(১) ধারায় এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ২১০ ধারাসহ অন্যান্য আইনেও মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে।

সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, অধস্তন অনেক দেওয়ানী আদালত, দেওয়ানী আপিল আদালত এবং অর্থ ঋণ আদালত মধ্যস্থতা সংক্রান্তে দেওয়ানী কার্যবিধির ৮৯ক ও ৮৯গ ধারার এবং অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ২২ ধারার বিধানাবলী যথাযথভাবে অনুসরণ করছেন না।

এই বিধানাবলী প্রয়োগ না করার কারণে দীর্ঘসূত্রিতার মাধ্যমে একদিকে যেমন মামলাজট বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে আপীল ও রিভিশন মামলার সংখ্যাও সমানহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বিচারপ্রার্থী জনগণের সময়, শ্রম ও অর্থের অপচয় হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অধস্তন দেওয়ানী আদালত সামূহে মামলাজট হ্রাস করার জন্য মধ্যস্থতার মাধ্যমে মোকদ্দমা নিস্পত্তি করা সমীচীন মর্মে সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর জুডিসিয়াল রিফর্মস ইতোমধ্যে মতামত প্রদান করেছে।

মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হলে দেওয়ানী মোকদ্দমা দ্রুত নিষ্পত্তিসহ আপিল ও রিভিশনের সংখ্যা কমবে এবং মামলা জট হ্রাস পাবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ‘১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৮৯ক(১) ধারার বিধান অনুাযায়ী মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিস্পত্তির জন্য আদালত শুনানি মুলতবি রেখে নিজেই মধ্যস্থতা করবেন কিংবা পক্ষগণের আইনজীবী বা

আইনজীবীদের নিকট অথবা আইনজীবী নিযুক্ত না হয়ে থাকলে পক্ষ বা পক্ষগণের সম্মতিতে উপধারা (১০) অনুসারে জেলা জজ কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে প্রণীত প্যানেলের কোন মধ্যস্থতাকারীর নিকট মোকদ্দমাটি মধ্যস্থতার জন্য প্রেরণ করবেন

অথবা আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ এর ২১ক(১) ধারার অধীন নিয়োগপ্রাপ্ত লিগ্যাল এইড অফিসারের নিকট প্রেরণ করবেন।

এছাড়াও অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ২২(২) ধারার বিধান অনুযায়ী মামলার পক্ষগণের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে কোন পক্ষ কর্তৃক নিয়োজিত নয় এমন একজন আইনজীবী

অথবা কোন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা অন্য যে কোন উপযুক্ত ব্যক্তিকে মামলা নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিযুক্ত করা যাবে।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ‘এমতাবস্থায়, অধস্তন দেওয়ানী আদালত এবং আপিল আদালতসমূহকে ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৮৯ক ও ৮৯গ ধারা, অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ২২ ধারা,

দ্যা আরবিট্রেশন এ্যাক্ট ২০০১ এর ২২(১) ধারা এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ২১০ ধারাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির যে বিধান রয়েছে তা যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।

একইসাথে ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৮৯ক(১০) ধারার বিধান অনুযায়ী দেশের সকল জেলার জেলা জজগণকে সংশ্লিষ্ট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির সাথে পরামর্শক্রমে মধ্যস্থতাকারীগণের একটি হাল-নাগাদ তালিকা প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে প্রেরণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.