“মজেছি তোমার প্রেমে, স্বর্গসুখ চাই না” গীতিকাব্য গ্রন্থটি প্রেমাস্পদ মুর্শিদ প্রেমের অন্যতম নিদর্শন

0 607

সুফিতত্ত হলো ঐশী সত্তার উপলব্ধি। আর এই সুফিবাদ আধ্যাত্ম সাধনার একটি উৎকৃষ্ট ধারণা। সুফিসাধকেরা যুগে যুগে মানুষের মনের অন্ধকার ঘুচাতে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করতে আলোকবর্তিকা হয়ে পথ দেখিয়েছেন। মহামহিমের সন্ধানে মিলন পিয়াসী এ সমস্ত পথেপথে পরিক্রমা করে, এখানে আছে নানা চড়াই উৎরাই, এসব পার হতে হতে সাধক যখন পরম মহিমান্বিত স্থানের সন্ধান পায়, তখন তার জীবন হয় পুণ্য আলোর বর্ণে বর্ণে রঞ্জিত। তাই ডা. লায়ন বরুণ কুমার আচার্য তাঁর রচিত ‘মজেছি তোমার প্রেমে, স্বর্গসুখ চাই না’ গীতিকাব্যের গ্রন্থটির মুখবন্ধে লিখেছেন: “অদৃশ্য যে সত্তায় মানুষ বিশ্বাসী, এই বিশ্বাসবোধ স্রষ্টার প্রেরিত পুরুষদের দ্বারা সৃষ্ট। আর বিশ্বাসবোধ জাগ্রত মহাপুরুষগণই আত্মার লালিত স্রষ্টা প্রেমে হয়েছে সুমহান।

যুগে যুগে সুফিসাধকরাই স্রষ্টার রহস্য জ্ঞান উন্মোচনে সক্ষম হয়েছেন নিজ কর্ম দ্বারা। কেননা নবী যুগের পর আউলিয়া কেরামই ধর্মের যুগ ভিত্তিক সংস্কারক হিসাবে কাজ করেছেন। এই মহান সুফিসাধক তথা আউলিয়া কেরামগণ স্রষ্টা প্রেম প্রেরণায় সজীব করে পূর্ণ মানবে উন্নীত করেন।” তিনি আরো লিখেছেন, “ মাইজভান্ডার দরবার শরীফ এই ভারতীয় উপমহাদেশে সুফি দর্শনের অনন্য নিদর্শন। খোদা প্রেমের প্রেরণার মাইজভান্ডারী । আর এই দরবারের গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী তেমনি একজন সিদ্ধপুরুষ, মহামানব। তিনি ছিলেন স্বয়ং খোদারই প্রেমাস্পদ। এ ছাড়াও হযরত শাহানশাহ সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী খোদাপ্রেমে বিভোর ছিলেন। তিনি আধ্যাত্ম জগতের মহামিলনের আশায় প্রেমাস্পদ হৃদয়ে মুনিবের সান্নিধ্যে আসার আকুতি নিয়েই বিহ্বল থাকতেন। এটাকে তাসাওউফের ভাষায় “শায়খের অবয়ব ধ্যান” বলা হয়। মুর্শিদের রঙে রঙিন হওয়ার ক্ষেত্রে এ ধ্যানের বড়ই প্রভাব রয়েছে।” তিনি বইটি শুরুতে লিখেছেন:

“মজেছি তোমার প্রেমে
চাই না কোন স্বর্গ-বাড়ী
গহিন গাঙ্গের তল ধরিতে
লইও আমার জিম্মাদারী
নিদানকালে-স্রোতের টানে হইও না পাষাণ।”

শুরুর দিকের গীতিকাব্য দিয়ে সহজেই ধারণা করা যায়, প্রিয়তম মুর্শিদের প্রতি আকুল আহ্বান তাঁর। মুর্শিদ যেন পরপারের কান্ডারী হয়। পরবর্তী গীতিকাব্যে তিনি লিখেছেন:
“মুর্শিদ তুমি ক্ষমা করো অধমকে
অনবরত থাক তুমি হৃদয় মন্দিরে।
অসীম করুণা ভরা মুর্শিদ তোমারই হৃদয়
জাগরণে স্বপনে পাই যেন তব চরণে আশ্রয়।”

তাই জাগতিক ভাবনা, ভাবনা কেন্দ্রিক অবয়ব, প্রেম-ভালোবাসা ইত্যাদি থেকে মুর্শিদ প্রেমের যে অসীম ধারা সৃষ্টি হয়, সেই সৃষ্টির রূপরেখা এই গ্রন্থের কবিতাগুলোর মাধ্যমে তা বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়াও মা-মাতৃভূমি, স্বদেশ প্রেমের অনুভূতি ও মহামানবগণের প্রতি বিনীত শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। জ্ঞানগর্ভ লিখনির মাধ্যমে একে একে তিনি লিখেছেন ‘আওলাদে রাসুল’, ‘মওলা হুজুর মাইজভান্ডারী রাতুল চরণে’র মতো গীতিকবিতা। এতে তিনি লিখেছেন:

“জিয়াবাবার গুপ্ত ধনের মালিক
মওলা হুজুর মাইজভান্ডারী কেবলা কাবা।
মওলাজী গুরুজী মওলা হুজুর বাবা
তোমার রাতুল চরণে অযোগ্য অপদার্থ আকুতি।”

মূলত আধ্যাত্ম চেতনা বা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায়ের একা অনুশীলনের বিষয় নয়। যা এই প্রেম-প্রেমাস্পদ জাগতিক মূল্যবোধকে ছাড়িয়ে পরপারের মুক্তির সোপান হিসেবে কাজ করবে। তিনি লিখেছেন:

“হে ত্রিশূলধারী, হে ভূ-পতি
তুমি কি দেখিতে পাও এই ভূ-মাতার নৃত্য
তুমি কি বুঝিতে পার না এ নৃত্যের মর্মবাণী?
চেয়ে আর থাকিও না পাথর হয়ে
কিছু বিষাক্ত বিষয় নিয়ে স্বস্তি দাও হে প্রভু।”

রঙিন কভারযুক্ত ৯৬ পৃষ্ঠার এই বইটির প্রতি পাতায় পাতায় সুফিবাদত্বের নিদর্শন, প্রিয়তম মুর্শিদের প্রেমের নিদর্শন, আধ্যাত্মিক চেতনামূলক আধ্যাত্ম বিষয় অবলীলায় প্রকাশিত হয়েছে।

বইটিতে মজেছি তোমার প্রেমে, মুর্শিদ ক্ষমা করো, আওলাদে রসুল, মওলা হুজুর মাইজভান্ডারী রাতুল চরণে, আমার মন কাঁদে, দীনের দয়াল গাউছুল আজম, অপূর্ব হাসি, আলোর প্রদীপ, প্রার্থনা, প্রতীক্ষায়, তোমারই জন্য, জ্যোতির্ময়, বাবা হযরত ধরার বুকে, হে প্রিয়তম মুর্শিদ, অতৃপ্ত ভালবাসা, তোমায় বুঝতে পারিনি, তুমি প্রশ্নবোধক চিহ্ন, মিছে স্বপ্ন, বৈশাখ, ছলনার মায়াজাল, অপরাধ নয়, তোমার সততা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, অবাধ্য ভালোবাসা, কষ্টতা বোঝনি, হৃদয়ের আর্তনাদ, মিথ্যে ভালোবাসা, বিশ্বাসঘাতক, নীল ভ্রমর, আমার সবটুকু, এক আত্মা, স্বপ্নের নতুবর্ষ, একুশ, আজ আমি একা, লীলাখেলা, ধিক্কার, মহা অপরাধ, প্রেমের দীপশিখা, জীবন, দেশরত্ন শেখ হাসিনা, ঠাঁই দিও গো ঠাঁই, ছলনাময়ী, এখন তুমি যে সুখী, ক্রন্দন, তোমারে রেখেছি, কষ্ট, আকাশ, ভুল চাওয়া, হৃদয় স্পন্দন, প্রাণ মম, বিতাড়িত, প্রাণে আশা, নিথর সুখ, মায়ের ভাষা, ভাগ্যবিধাতা, চরণধূলা, তুমি সুখে থাকো, অবিচার, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, হে প্রভু, মা, ভালোবাসা, শূন্যতা, আহ্বান, বিরহীর দুঃখ, প্রকৃতি, বন্ধু আমার, আহসান উল্লাহ মাস্টার, ঝিলিক, আলেয়ার আলো, সর্বসুখের প্রত্যাশা, তুমি এলে না, নব জাগরণে, তুমি আসবে বলে, অনুভূতি, হৃদয়ে হাহাকার, শিক্ষাগুরু, সৃষ্টি, হে ত্রাণকর্তা, বেঁচে থাকার প্রেরণা, হে মোর দেবতা শিরোনামে ৮১টি গীতিকবিতার ভাবার্থ পাঠককুলে আলোড়ন সৃষ্টি করবে।

এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে ২৯ আশ্বিন বাবা ভান্ডারী পবিত্র খোশরোজ শরীফ উপলক্ষে। আর উৎসর্গ করা হয়েছে ‘মজজুবে সালেক, মাহ্বুবে খালেক, ফানাফিল্লাহ্ বাকাবিল্লাহ্ মোক্তাদায়ে আহ্লে কাবা, গাউসুল আজম বিল বেরাসত হযরত মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী প্রকাশ বাবা ভান্ডারী কাদ্দাসাল্লাহু এর পবিত্র করকমলে’। গ্রন্থটির অসাধারণ প্রচ্ছদে আধ্যাত্মিক স্বরূপ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রচ্ছটির অলংকরণ করেছেন মো. তাজবিউল হাসান রুমি ও মো. তাওহিদুল হাসান রাকিব। ফাতেমা প্রকাশনী থেকে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। বইটি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে দুইশত টাকা। আর বইটির প্রকাশক চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার হাইদচকিয়াস্থ সূর্যগিরি আশ্রম।

মূলত বইটিতে মুর্শিদপ্রেমের নিদর্শন তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এবং প্রেমাস্পদ মুর্শিদকে পরপারে কান্ডারী হিসেবে পাওয়ার আকুতি জানানো হয়েছে। এই গ্রন্থটি পাঠ করে পাঠকসমাজ মুর্শিদপ্রেমের আদর্শে উজ্জীবিত হবেন এবং উপকৃত হবেন বলে বিশ্বাস রাখি। গ্রন্থটির রচয়িতা ডা. বরুণ কুমার আচার্যের সর্বাঙ্গীণ শুভ ও মঙ্গল কামনা করছি এবং বইটি বহুল প্রচার কামনা করছি।

বই পর্যালোচনা: লেখক- এ কে এম আবু ইউসুফ। কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, পরিবেশবিদ ও গণমাধ্যমকর্মী।

Leave A Reply

Your email address will not be published.