জাপানে আইনের ফাঁকফোকরে যেভাবে পার পেয়ে যান ধর্ষক

0 112

অনলাইন ডেস্ক:

তাকে ধর্ষণের কয়েকদিন পর, জাপানি তরুণী মেগুমি ওকানো বলেন, তিনি বুঝতে পেরেছেন, যে হামলাকারী (ধর্ষক) মুক্ত হয়ে যাবে।
মেগুমি, ভালো করেই চিনতেন যে তাকে যৌন হয়রানি করেছে এবং তাকে এখন তাকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। তবে মেগুমি জানতেন যে দেশটিতে বহাল যে আইন তাতে তার সঙ্গে হয়ে যাওয়া অনাচারে কোন মামলা হবে না। কারণ এই ঘটনাকে জাপানি কর্তৃপক্ষ ধর্ষণ হিসাবে বিবেচনা করতে নারাজ।
তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী পুলিশকে ঘটনা না জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।
‘যেহেতু আমি সেভাবে ন্যায় বিচার পেতে কোন কিছুই করতে পারিনি। সেই ধর্ষক এই সুযোগে মুক্ত জীবনযাপন করতে পেরেছে। এটা আমার জন্য বেদনাদায়ক,` যোগ করেন মেগুমি।
তবে মেগুমি আশাবাদী যে পরিবর্তন আসতে পারে। জাপানের পার্লামেন্ট এখন দেশটির যৌন নিপীড়ন আইনের সংস্কারের জন্য একটি যুগান্তকারী বিল নিয়ে বিতর্ক চলছে। এটি হতে যাচ্ছে এক শতাব্দীর মধ্যে এই ধরনের দ্বিতীয় সংশোধন।
বিলটিতে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণটি হচ্ছে, আইন প্রণেতারা ধর্ষণকে কেবল `জোরপূর্বক যৌন মিলন` এই সংজ্ঞা থেকে বিস্তৃত করে `অসম্মতিমূলক যৌন মিলন` কেও অর্ন্তভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। যা বিশ্বের অনেক দেশেই আইনগতভাবে স্বীকৃত।

জাপানি তরুণী মেগুমি। ছবি: সংগৃহীতজাপানে এই বিষয়টি এখনও গুরুত্ব পায়নি। রুণী মেগুমি। ছবি: সংগৃহীত

জাপানের আইন ধর্ষণ হতে হলে যৌন মিলন অথবা যৌন হেনস্থা হতে হবে জোরপূর্বক। পাশাপাশি সেই সময় নারীকে ভীতি দেখানো ও শারীরিকভাবে আক্রমণ বা হামলার মতো এই দুটি কার্যকলাপও থাকতে হবে। তবে সংজ্ঞাহীন নারী বা যার প্রতিরোধ করার মতো শারীরিক সক্ষমতা নেই তার সঙ্গে অসম্মতিতে যৌন মিলন ধর্ষণ হিসেবে ধরা হবে।
জাপানের এই নীতিমালা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে অসঙ্গতিসম্পূন্ন।
এমন সব আইনি দূর্বলতা দেশটিতে নারীদের যথাযথ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করেছে বলে দাবি করেন নারী অধিকারকর্মীরা। এতে করে মেগুমির মতো ভুক্তভোগী নারীরা আইনের দারস্ত হতে চান না।
২০১৪ সালে টোকিওর একটি ঘটনা উদাহরণ হিসেবে নেয়া যায়। সেখানে এক ব্যক্তি ১৫ বছর বয়সী একটি কিশোরীকে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে যৌন মিলন করে। তবে বিচারে তিনি ধর্ষণ মামলা থেকে খালাশ পেয়ে যান। আদালতের চুক্তি ছিল ওই মেয়ে পর্যাপ্ত শক্তি প্রয়োগ করে ওই ব্যক্তিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে পারত। যা মেয়েটি করেনি।
ওই বিচারে কিশোরীকে প্রাপ্ত বয়স্ক নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।  কারণ জাপানে যৌন মিলনে সম্মতি প্রদানের ক্ষেত্রে বৈধ বয়সসীমা ১৩। অন্যান্য দেশে তা কমপক্ষে ১৪ বা তারও বেশী।
এদিকে মেগুমির মামলায় বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তির সঙ্গে তিনি টেলিভিশন দেখছিলেন। এ সময় ওই ব্যক্তি তার সঙ্গে যৌন মিলনে উদ্ধত হয়। মেগুমি তাকে না করে দেন। সে তা পরোয়া না করে মেগুমিকে জাপটে ধরে। এ সময় দু জনের মধ্যে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি হয়। এর পর মেগুমি পর্যদস্ত হন এবং প্রতিহত করার চেষ্টা থামিয়ে দেন।
দেশটির বর্তমান আইনে এই ধরনের যৌন মিলনকে ধর্ষণের অপরাধ হিসেবে দেখা হয় না।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যৌন মিলনে সম্মতি দেয়ার ক্ষেত্রে বৈধ বয়সসীমা ১৩ থেকে ১৬ বছর করার আহ্বান জানিয়েছে জাপানের বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্যানেল।
জাপানের বর্তমান আইন মোতাবেক, ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীকেই প্রমাণ হাজির করতে হয়। নতুন প্রস্তাবে এ জায়গাটিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
২০১৯ সালে বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনায় জাপানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। এরপর থেকেই যৌনতা সংশ্লিষ্ট অপরাধ ও হয়রানির আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয় জাপানে।
বর্তমানে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে জাপানে যৌন সম্মতি প্রদানের বয়সসীমা সবচেয়ে কম। জি-৭ জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যেও জাপান সর্বনিম্ন। জার্মানি ও ইতালিতে এই বয়স ১৪ বছর আর ফ্রান্স ও গ্রিসে ১৫ বছর। এছাড়া যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে তা ১৬ বছর।
জাপানের বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ইউসুকে আসানুমা বলেন, ‘ধর্ষণ মামলায় ভুক্তভোগীর জয়কে সহজ করা বা কঠিন করার বিষয় নয় এটি, বরং সঠিক রায়ের অর্থাৎ বিচারের ধারাবাহিকতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে এটি করা হচ্ছে।’
সূত্র: বিবিসি

Leave A Reply

Your email address will not be published.