দোনেৎস্কে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১৩ জন নিহত

0 119

পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত শহর দোনেৎস্কে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ১৩ জন নিহত এবং আরো অনেকে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাশিয়া সমর্থিত মেয়র।

আলেক্সি কুলেমজিন সেজন্যে ইউক্রেনের গোলাবর্ষণকে দায়ি করেছেন। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

২০১৪ সাল থেকে রাশিয়া সমর্থিত ‘প্রক্সি’ কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্ক। শহরটিকে টার্গেট করার জন্য তারা বারবার ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানান, শহরের পশ্চিমের একটি গ্রাম থেকে দোনেৎস্কের কুইবিশেভস্কি অংশে নয়টি গোলা ছোঁড়া হয়েছে। তবে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী অধ্যুষিত এলাকা থেকে কোনো ঘটনা স্বাধীনভাবে যাচাই করা বেশ কঠিন।

স্থানীয় নেতা ডেনিস পুশিলিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে একটি বাসস্টপ, দোকান ও একটি ব্যাংকে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রুশ বাহিনী ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে আরো দক্ষিণে দোনেৎস্ক অঞ্চলের এলাকাগুলো দখল করলেও ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে শহরের উপকণ্ঠ থেকে পুরোপুরি হঠিয়ে দেয়ার জন্য তাদের বেশ লড়াই করতে হচ্ছে।

দক্ষিণের পাশাপাশি ইউক্রেনীয় বাহিনী উত্তর-পূর্বে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে এবং তাদের সবচেয়ে নাটকীয় অগ্রগতি এসেছে এই মাসে উত্তর খারকিভ অঞ্চলে।

লুহানস্ক অঞ্চলের প্রধান সেরহি হাইদাই একটি ভিডিও শেয়ার করেন যাতে দেখা যাচ্ছে ইউক্রেনীয় ট্যাঙ্ক একটি ভাসমান ব্রিজ পার হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইউক্রেন এখন ওসকিল নদীর বাম তীর নিয়ন্ত্রণ করছে যাকে উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের সম্মুখ ভাগ হিসেবে দেখা হয়। ইউক্রেনীয় বাহিনী যদি ওসকিলের পূর্ব দিক নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় তবে এটি একটি বড় ধরনের অগ্রগতি হবে।

হাইদাই বলেন, পরে টার্গেট হবে লাইমান শহরকে মুক্ত করা, যেটি মে মাসে রুশ বাহিনী দখল করেছে।

রোববার গভীর রাতে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার রাত্রিকালীন ভাষণে বলেন, ‘সাম্প্রতিক দিনগুলো একটু ঝিমিয়ে পড়া স্থবির বলে মনে হতে পারে। তবে কোনো স্থবিরতা থাকবে না। এর পরে যা ঘটবে তার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে সবাই। পুরো ইউক্রেনকে অবশ্যই মুক্ত হতে হবে।’

সোমবার দক্ষিণে একটি পারমাণবিক কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক কেন্দ্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনারহোয়াটম বলেন, পারমাণবিক চুল্লি থেকে তিন শ’ মিটার দূরে একটি রকেট এসে পড়েছে।

মাইকোলাইভ অঞ্চলে অবস্থিত সাউথ প্ল্যান্ট বলে পরিচিত পারমানবিক কেন্দ্রটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম।

জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বলছে, এনারহোয়াটম তাদের জানান, রকেট হামলায় সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যাহত হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রটি গ্রিডের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। তিনটি চুল্লির সবগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে।

যুদ্ধের শুরুতে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের এবং ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক কেন্দ্র জাপোরিশা দখল নেয়ার পর থেকে কেন্দ্রটি বারবার গোলাবর্ষণের শিকার হয়েছে।

এটিকে রক্ষা করার জন্য আইএইএ একটি নিরাপত্তা অঞ্চল তৈরি করার আহ্বান জানান। আইএইএ বলেছে সেখানে পরিস্থিতি নাজুক ও অনিশ্চিত। এর ছয়টি চুল্লি বন্ধ অবস্থায় আছে, তবে নিরাপদ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পাচ্ছে।

এদিকে মুক্ত করা শহর ইজিউমে গণকবর থেকে ৪৫০টি লাশ আবিষ্কার হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন।

এর পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্সি রাশিয়ার আগ্রাসনের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের গঠনের জন্য আহ্বান জানান। বর্তমানে প্রেসিডেন্সির দায়িত্বে রয়েছে চেক প্রজাতন্ত্র।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘এটি পুরো মিথ্যা এবং অবশ্যই আমরা এই গল্পের সত্যকে তুলে ধরবো।’

শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ইউক্রেনের আগে রাশিয়ার যে সামরিক পরিকল্পনা আছে তাতে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ কোনো পরিবর্তন আনবে না।

সোমবার মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি ভিডিও পোস্ট করে। সেখানে তারা বলছে, রাশিয়ার হেলিকপ্টার ইউক্রেনের সেনা ও সরঞ্জাম ধ্বংস করছে।

তবে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে, খুব সম্ভবত গত ১০ দিনে ইউক্রেনে চারটি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে রাশিয়া। কারণ ইউক্রেনের অগ্রগতির চাপের মুখে রাশিয়ার বিমানবাহিনী স্থল বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য আরো বেশি ঝুঁকি নিচ্ছে।

গবেষণা সংস্থা দ্যা ইন্সটিটিউট ফর দ্যা স্টাডি অফ ওয়ার বলছে, রাশিয়া তার প্রচলিত সামরিক ইউনিটের পরিবর্তে অনিয়মিত স্বেচ্ছাসেবক এবং প্রক্সি বাহিনীর ওপর ক্রমাগতভাবে নির্ভর করছে।

রাশিয়া বলে আসছে, তারা ইউক্রেনে নব্য-নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। যদিও এই দাবি ব্যাপকভাবে খারিজ করে দেয়া হয়েছে।

জাতিসঙ্ঘ বলছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর থেকে প্রায় ছয় হাজার বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, আট হাজারের বেশি আহত হয়েছে এবং ৭০ লাখের বেশি ইউক্রেনীয় পুরো ইউরোপজুড়ে শরণার্থী হয়ে পড়েছে।

প্রকৃত বেসামরিক নাগরিক মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। হাজার হাজার যোদ্ধা নিহত বা আহত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহকারী রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে একটি অর্থনৈতিক লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে। ইউক্রেনের আক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেশগুলো রাশিয়ার ওপরে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.