মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যে ১২ যুদ্ধে!

0 153
ছবি: ইন্টারনেট
ছবি: ইন্টারনেট
সম্প্রতি ঢাকঢোল বাজিয়ে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের অভ্যন্তরে সেনা অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযানে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনেস্কিও নিজেদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিতের জন্য লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। যুদ্ধ অসংখ্য নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানীর কারণ। পূর্ব ইউরোপের এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে ইউরোপসহ গোটা বিশ্বেই, যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে। এর আগেও দুইটি বিশ্বযুদ্ধসহ অসংখ্য যুদ্ধ দেখেছে বিশ্ব। কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে সেসব যুদ্ধে। মানব ইতিহাসে সবচেয়ে নিহত হওয়া এরকম ১২টি ভয়াবহ যুদ্ধ নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধ
ছবি: এমএসএন ডট কম

ছবি: এমএসএন ডট কম
১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত এই যুদ্ধটি স্থায়ী ছিল। ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো নামক আফ্রিকার এই দেশটিতে জাতিগত লড়াইয়ের কারণে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। মূলত টুটসি এবং হুতু সম্প্রদায়ের দ্বন্দ্বে এই লড়াই শুরু হয়। হুতুরা কৃষি কাজে অভ্যস্ত ছিল আর টুটসিরা পশু পালন করতো। শেষ পর্যন্ত টুটসিরাই ক্ষমতায় আসে। বিদেশি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা দেশটিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে পাশ্চাত্যের দেশগুলো বিনামূল্যে দেশটির সম্পদ লুট করেছে। আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নেপোলিয়ানের যুদ্ধ
ছবি: এমএসএন ডট কম

ছবি: এমএসএন ডট কম
মে ৫, ১৭৮৯ সালে বিপ্লবের পর ফ্রান্সের রাজা লুইস ক্ষমতাচ্যুত হন এবং তাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। পরবর্তীতে ৯ নভেম্বর, ১৭৯৯ সালে এক ক্যু’য়ের মাধ্যমে নেপোলিয়ান নিজেকে ফ্রান্সের সর্বাধিনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর গোটা ইউরোপ জুড়ে শুরু হয় সিরিজ যুদ্ধ যা ইতিহাসে ‘নেপোলিয়ানিক ওয়ারস’ বা নেপোলিয়ানের যুদ্ধ নামে পরিচিত। গোটা ইউরোপজুড়ে ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের মিত্র- যেমন রুশদের জার রাজতন্ত্র এবং বৃটেনে রাজ পরিবারসহ অনেকের সাথে লড়াই শুরু হয় নেপোলিয়ানের। শেষ পর্যন্ত নেপোলিয়ানের পরাজয় হয় এবং ফ্রান্সে ফের রাজতন্ত্রের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। পাঁচটি বড় বড় যুদ্ধসহ এই লড়াইয়ে ৪০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ মারা যায়।
ত্রিশ বছরের যুদ্ধ
ছবি: এমএসএন ডট কম

ছবি: এমএসএন ডট কম
দ্য থার্টি ইয়ারস ওয়ার বা ত্রিশ বছরের যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল ১৬১৮ সাল থেকে ১৬৪৮ সাল পর্যন্ত। এটিও একটি সিরিজ যুদ্ধ ছিলো। রোমান সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ এই ধর্ম যুদ্ধটি রোমান ক্যাথলিক ও প্রটেস্টেন্টদের মধ্যে সংঘটিত হয়। যুদ্ধটি ইউরোপের সিভিল ওয়ার (গৃহযুদ্ধ) নামেও পরিচিত। ইউরোপে এই যুদ্ধের ফলাফল ছিলো অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। এই যুদ্ধে প্রায় ৫০ থেকে ৮০ লাখ মানুষ নিহত হয়। যুদ্ধের ফলে জার্মানির কোনো কোনো অঞ্চলের জনসংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি কমে যায়।
চীনের গৃহযুদ্ধ
ছবি: এমএসএন ডট কম

ছবি: এমএসএন ডট কম
চাইনিজ সিভিল ওয়ার বা চীনের গৃহযুদ্ধ সংগঠিত হয় ১৯২৭ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত। এই যুদ্ধে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ মানুষ মারা যান। যুদ্ধটি সংঘটিত হয় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এবং চীনের ন্যাশনালিস্ট পার্টির মধ্যে। ১৯১২ সালে চীনের রাজতন্ত্র কিং কোর্টকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে সান ইয়াৎ সেন প্রতিষ্ঠিত চায়নার জাতীয়তাবাদী দল কুমিনতাং। যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত পরাজয়বরণ করে ১৯৫০ সালে এই দলের নেতৃবৃন্দ তাওয়ান পালিয়ে যায়।
রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ
ছবি: এমএসএন ডট কম

ছবি: এমএসএন ডট কম
১৯১৭ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত যুদ্ধটি স্থায়ী হয়। রাশিয়ার জার রাজতন্ত্র উৎখাতের মহান নেতা লেনিনের বলশেভিক সরকারের রেড আর্মির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়েছিল পুঁজিবাদী, রাজতন্ত্রের মিত্র ও হোয়াইট আর্মি। এই যুদ্ধে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ নিহত হয় এবং লেলিন দেশটির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন।
দুনগান বিদ্রোহ
ছবি: এমএসএন ডট কম

ছবি: এমএসএন ডট কম
রাশিয়ার কিং সাম্রাজ্যের রাজত্বকালীন সময়ে ১৮৬২ থেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলে। সাম্প্রদায়িক এ লড়াইয়ে হুই সম্প্রদায়ের লোকের হানদের ওপর গণহত্যা চালায়। প্রতিশোধ নিতে পরবর্তীতে হান সম্প্রদায়ও হুইদের গণহারে হত্যা করে। এই যুদ্ধে প্রায় ২ কোটি মানুষ মারা যায়। ১৮৯৫-৯৬ সালেও আরেকটি দুনগান বিদ্রোহ হয়। নকশাবন্দী সুফী ধারার বিভিন্ন মুসলিম জনগোষ্ঠী কিং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয়।
এন লুসান বিদ্রোহ
ছবি: এমএসএন ডট কম

ছবি: এমএসএন ডট কম
এন লুসান বিদ্রোহটি ছিলো চীনের টেং রাজতন্ত্রকে পরাভূত করে তাদের সাম্রাজ্য দখলের উদ্দেশ্যে ইয়ান রাজপরিবারের একটি প্রচেষ্টা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয় এবং ইয়ান রাজ পরিবারেরই পতন ঘটে। এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন টেং রাজতন্ত্রের নিয়ন্ত্রাণাধীন সেনাবাহিনীরই জেনারেল এন লুসান। যুদ্ধটি ৭৫৫ থেকে ৭৬৩ খৃস্টাব্দে সংগঠিত হয়। এতে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ নিহত হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
ছবি: ইন্টারনেট

ছবি: ইন্টারনেট
১৯১৪ সালে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্ডিনান্ড ও তার স্ত্রীকে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এ যুদ্ধে জার্মানির নেতৃত্বাধীন অক্ষশক্তির পরাজয় ঘটে। এতে মুসলিম সাম্রাজ্যেও বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। জার্মানিকে সমর্থন জানিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়া তৎকালীন উসমানী খেলাফতও ভেঙে যায়। বৃটিশ সাম্রাজ্যের উসকানিতে আরব জাতীয়তাবাদের স্লোগান তুলে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চল স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯১৪ সাল থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত চলা এই যুদ্ধে প্রায় দুই কোটি মানুষ নিহত হয়।
তাইপিং বিদ্রোহ
ছবি: এমএসএন ডট কম

ছবি: এমএসএন ডট কম
এই বিদ্রোহটি চীনের কিং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়েছিলো ১৮৫০ থেকে ১৮৬৪ সাল পর্যন্ত। এই বিদ্রোহে প্রায় ২ থেকে ৩ কোটি মানুষ নিহত হয়। তাইপিং বিদ্রোহ এতটা রক্তাক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, তাইপিং সম্প্রদায়ের সবাই ছিলেন জন্মগত যোদ্ধা। যাদের অনেকেই আবার কিং রাজতান্ত্রিক সেনাবাহিনীর সৈনিকও ছিলেন, আর তাই সৈনিক ও বিদ্রোহীদের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারায় গণহারে তাদেরকে হত্যা করা। বিদ্রোহটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ছিলো চীনের রাজনীতিতে।
মিং রাজতন্ত্রকে কিং রাজতন্ত্রের দখল
ছবি: এমএসএন ডট কম

ছবি: এমএসএন ডট কম
মঙ্গল, হান চাইনিজ এবং মানচুদের নিয়ে কিং রাজতন্ত্রের গঠিত সেনাবাহিনীর মিং রাজতন্ত্রকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে। ১৬১৮ থেকে ১৬৮৩ পর্যন্ত এই যুদ্ধে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ নিহত হয়।
দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ
ছবি: এমএসএন ডট কম

ছবি: এমএসএন ডট কম
১৯৩৭ সালে চীনে আক্রমণ চালায় জাপান। এর মাধ্যমেই শুরু হয় দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর অন্যতম একটি কারণ। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র জাপানে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করলে এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধে প্রায় ৩ কোটি মানুষ মারা যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
ছবি: স্মিথ সোনিয়ান ম্যাগাজিন

ছবি: স্মিথ সোনিয়ান ম্যাগাজিন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৩৯ সাল থেকে শুরু হয়ে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই যুদ্ধে প্রায় ৭ কোটি মানুষ নিহত হয় যা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তাক্ত যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ অধ্যায়। আস্তে আস্তে জড়িয়ে পড়ে আমেরিকা-রাশিয়া-যুক্তরাজ্য-জাপানসহ তৎকালীন সামরিক পরাশক্তিরা। অস্ত্রের ঝনঝনিতে কেঁপে ওঠে গোটা বিশ্ব। এই যুদ্ধে আমেরিকা-রাশিয়া-যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বাধীন মিত্রশক্তি জয়লাভ করে এবং জার্মানি-ইতালি-জাপানের নেতৃত্বাধীন অক্ষশক্তির পরাজয় হয়।
Leave A Reply

Your email address will not be published.