হাতুড়ি খুঁজতে গিয়ে মিললো বিপুল গুপ্তধন

0 449

খুঁজতে গিয়েছিলেন হারিয়ে যাওয়া একটি হাতুড়ি। তবে হাতে উঠে এসেছিল ১৬০০ বছর আগের গুপ্তধন। এতে রাতারাতি ভাগ্য বদলে যায় ইংল্যান্ডের এক বৃদ্ধের। তার নাম এরিক লয়েস।

এতে করে রাতারাতি ভাগ্য বদলে গিয়েছিল তার। চতুর্থ ও পঞ্চম শতকের রোমান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বড় সম্পদ যে তিনি পেয়ে গেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে সেটা বুঝতেই পারেননি ওই বৃদ্ধ।

১৯৯২ সালের ১৬ নভেম্বর ওই বিপুল সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছিলেন সাফোক কাউন্টির ওক্সন গ্রামের বাসিন্দা এরিক লয়েস। মালির কাজ থেকে বছর পাঁচেক আগে অবসর নিয়েছিলেন।

অবসরের পর গুপ্তধন খুঁজে বেড়ানোই নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সে জন্য ৭০ বছরের লয়েসকে একটি মেটাল ডিটেক্টরও উপহার দিয়েছিলেন স্ত্রী গেটা।

গেটার উপহার দেওয়া মেটাল ডিটেক্টরটির দাম ছিল সাড়ে ৪০০ ডলার। তবে তার সাহায্যেই যে এত গুপ্তধন পেয়ে যাবেন, তা কে জানত। ১৯৯২ সালে তার আর্থিক মূল্য ছিল ১৭ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড। স্বাভাবিকভাবেই আজ তার বাজারদর আরও বেশি।

ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড দ্য সান’কে লয়েস সেই গুপ্তধন পাওয়ার গল্প বলেছিলেন। তিনি জানান, একটি হাতুড়িসহ কয়েকটি যন্ত্রপাতি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সেসব খুঁজতেই মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে বাড়ির কাছে একটি মাঠে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, মাঠে গিয়ে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে খোঁজাখুঁজি করেছিলাম। মাঠের এক জায়গায় মেটাল ডিটেক্টরে ‘বিপ’ করে শব্দ হতেই মাটি খুঁড়তে শুরু করি। দেখি, কিছুটা নিচে একটা রুপার রোমান মুদ্রা। এক ফুটের মধ্যেই আরও একবার ‘বিপ’ করে শব্দ। এবার বেশ বিকট আওয়াজ। সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি করে কয়েক’শ সোনা-রুপার মুদ্রা ও চামচ বের করি।

সম্পদের সন্ধান পেতেই পুলিশ ডেকেছিলেন লয়েস। খবর যায় সাফোক কাউন্টি কাউন্সিলেও। ঘটনাস্থলে ছুটে যান কাউন্সিলের প্রত্নতত্ত্ববিদ জুডিথ প্লভিয়েজ। একটি ওক কাঠের বাক্সে ঠাসা ছিল সোনাদানা-গয়নাগাঁটি। ধনসম্পদ উদ্ধারের পর তা পরিষ্কার করে যাচাই করার জন্য ব্রিটিশ মিউজিয়ামে পাঠানো হয়েছিল।

সংবাদমাধ্যমে ওই সময় সময় জুডিথ বলেন, সম্পদের আর্থিক মূল্য যাচাই করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এর বাজারদর হয়তো দেড় কোটি পাউন্ড। যদিও ঐতিহাসিকভাবে এটি অমূল্য সম্পদ!

জুডিথের দাবি, প্রায় ১৬০০ বছর আগে রোমান শাসনাধীন ব্রিটেনের কোনো ধনী পরিবার হয়তো একটি বাক্সের ভিতরে ওই ধনসম্পত্তি লুকিয়ে রেখেছিলেন।

প্রসঙ্গত, খ্রিস্টপূর্ব ৪৩ থেকে পরের প্রায় ৪০০ বছর পর্যন্ত রোমানদের দখলে ছিল ব্রিটেন। জুডিথ বলেন, রোমান সাম্রাজ্য সম্পর্কে যে তথ্যপ্রাপ্তি হবে, তার নিরিখে একে অমূল্য সম্পদ বলা যায়। বিপুল সম্পদের খোঁজ পেলেও তা সরকারের ঘরেই জমা হয়েছিল। কারণ, যে মাঠটি থেকে লয়েস সম্পদের খোঁজ পেয়েছিলেন, তা সাফোক কাউন্টির মালিকানাধীন ছিল। ফলে আপাতত রোমান সাম্রাজ্যের বিপুল সম্পদের ঠাঁই হয়েছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে।

ব্রিটিশ মিউজিয়ামের পক্ষ থেকে জানানো হয়, একটি ছোট বাক্সে রোমান সাম্রাজ্যের ১৪ হাজার ৮৬৫টি সোনা-রুপা-ব্রোঞ্জের মুদ্রা রাখা ছিল। এছাড়া সোনা-রুপার কাটাচামচ, পাত্রসহ প্রায় ২০০টি জিনিসও উদ্ধার হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে পুরোপুরি রুপার একটি প্যান্থারের মূর্তি। সোনার চেন, বহুমূল্য পাথর বসানো কয়েকশো গয়না। এক পাউন্ডেরও বেশি ওজনের চুনি বসানো একটি সোনার হার।

ব্রিটিশ মিউজিয়ামের প্রত্নতত্ত্ববিদরা জানান, ২০২০ সাল পর্যন্ত এর আর্থিক মূল্য ৩৬ লাখ ৪০ হাজার পাউন্ড। বিপুল ধনসম্পত্তির খোঁজ পাওয়ার পর ব্রিটিশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী অর্থ পেয়েছিলেন লয়েস। ১৯৯২ সালের খোঁড়াখুঁড়ির পর বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রায় ১৫ লাখ ডলারের আশা করতে পারেন তিনি। সূত্র : আনন্দবাজার

Leave A Reply

Your email address will not be published.