বিদেশেও বিনিয়োগ করতে পারবে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা

0 418

আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের পাঁচ বছরের বার্ষিক গড় রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশ বা সর্বশেষ নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের প্রকাশিত নিট সম্পদের ২৫ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, সে পরিমাণ অর্থ বিদেশে ইক্যুইটি হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারবে।

গত বুধবার (২৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ইনভেস্টমেন্ট ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে। ‘মূলধনি হিসাব লেনদেন (বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগ) বিধিমালা, ২০২২’ শীর্ষক প্রজ্ঞাপন প্রসঙ্গে একটি নির্দেশনা জারি করে দেশের সব অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে পাঠিয়েছে তারা।

নির্দেশনায় বলা হয়, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৭ এর ২৭ নম্বর ধারার অধীনে মূলধনী হিসাবের লেনদেন (বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগ) বিধিমালা, ২০২২ জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান বলেন, “এমন জায়গায় বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না যা দেশের রপ্তানির জন্য চ্যালেঞ্জ বা প্রতিযোগিতা বাড়াতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা যদি ইথিওপিয়ায় একটি তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপন করে, তাহলে এটি আমাদের জন্য আরও প্রতিযোগিতা তৈরি করতে পারে, কারণ তারা মার্কিন বাজারে শুল্কমুক্ত রপ্তানি করতে পারে।”

যারা অনুমোদন পেয়েছে: কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৩ সালের পর এখন পর্যন্ত রপ্তানি প্রত্যাবাসন কোটা (ইআরকিউ) থেকে সাত প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে। তার মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের ডিবিএল গ্রুপ ইথিওপিয়ায় একটি পোশাক কারখানা নির্মাণ শুরু করেছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে তারা সেই কারখানায় উৎপাদন শুরু করতে চায়। ডিবিএলকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যায়ক্রমে ৯৫ লাখ ডলার সেখানে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে।

এ ছাড়া মবিল যমুনা মিয়ানমারে একটি প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ ১০ হাজার ডলার বিনিয়োগের অনুমতি পেয়েছে। এসিআই হেলথকেয়ার যুক্তরাষ্ট্রে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ডলার ও স্কয়ার ফার্মা ৫০ লাখ ডলার নেওয়ার অনুমতি পেয়েছে। ২০১৪ সালে এস্তোনিয়ায় বিনিয়োগের অনুমতি পায় ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালস। যুক্তরাজ্যেও ১০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড বিনিয়োগে একটি নিজস্ব সাবসিডিয়ারি খুলেছে কোম্পানিটি।

আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় ইস্পাত কারখানা খোলার অনুমতি পেয়েছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম স্টিল। প্রতিষ্ঠানটিকে শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানি প্রত্যাবাসন কোটা (ইআরকিউ) থেকে ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার কেনিয়ায় বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং পেয়েছে সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগের অনুমতি।

আরও যারা আগ্রহী: বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আকিজ জুট মিলস মালয়েশিয়ায় দুটি কোম্পানি অধিগ্রহণ করার জন্য ২ কোটি ডলার বিদেশে নিতে চায়। হা-মীম গ্রুপ হাইতিতে পোশাক কারখানা করতে ১ কোটি ডলার নিতে চায়। নিটল-নিলয় গ্রুপ গাম্বিয়ায় ব্যাংক স্থাপনের জন্য ৭০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে চায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের আবেদন করেছে, যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরে শিপইয়ার্ড কারখানা স্থাপনের অনুমোদন চেয়ে সামিট গ্রুপের একটি আবেদন রয়েছে। কম্বোডিয়ায় জমি কিনে শিল্প স্থাপনের অনুমোদন চেয়েছে মেঘনা গ্রুপ। এ ছাড়া ভারতে কোম্পানি খোলার জন্য প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। বিদেশে আখনির্ভর চিনিকল স্থাপনের জন্য দেশবন্ধু গ্রুপ অর্থ নেওয়ার অনুমতি চেয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একজন রপ্তানিকারক ব্যবসা বাড়াতে অন্য দেশে লিয়াজোঁ বা সহযোগী অফিস খোলা ও ব্যয় নির্বাহের জন্য বছরে ৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত নিতে পারেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.