মিয়ানমারে বিমান-হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালাচ্ছে জান্তা

0 266

মিয়ানমারে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলেছে গণতন্ত্রপন্থি বিদ্রোহী জনতা। জান্তা সেনা আর জনতার মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। তবে বিদ্রোহীদের দমনেও উঠে পড়ে লেগেছে জান্তা সরকার।

স্থল অভিযানের পাশাপাশি এবার বিমান-হেলিকপ্টারেও হামলা চালাচ্ছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। পিছু হটছে না বিদ্রোহী যোদ্ধারাও। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর ওপর বেশ কিছু সফল আক্রমণ চালিয়েছে তারা। শুধু তাই নয়, নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার বাড়াতে সেনাদের আটক করে গোলাবারুদ ছিনিয়ে নিচ্ছে বিদ্রোহীরা।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দেশটির কুখ্যাত সেনাবাহিনী। এরপর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করে সাধারণ জনগণ। সেই সঙ্গে লড়াই জোরদার করে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের সশস্ত্র গোষ্ঠী। এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগ দিচ্ছে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। গড়ে তুলেছে ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্স’ (পিডিএফ)। ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ছায়া সরকারের (ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট) পক্ষে লড়ছেন এর সদস্যরা। গণতন্ত্র উদ্ধারের এ বিক্ষোভ দমনে এখন পর্যন্ত এক হাজার তিনশ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

এএফপি জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে রাজ্যে রাজ্যে বিদ্রোহীদের ওপর অভিযান জোরদার করেছে সেনাবাহিনী। এসব অভিযানে সামরিক হেলিকপ্টার ও জেটবিমান ব্যবহার করছে তারা। সর্বশেষ শুক্রবার মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্য সাগাইংয়ে পিডিএফ যোদ্ধাদের একটি মিটিং চলাকালে বিমান হামলা চালায় তাতমাদোর বিমান সেনারা।

গ্রামবাসীরা জানান, বিদ্রোহীদের সঙ্গে চলমান লড়াইয়ের মধ্যে এদিন সেনাবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার সাগাইংয়ে এসে নামে এবং শত শত সেনা মোতায়েন করে। এই সময় একটি বিমান আকাশ থেকে গ্রামের বেশ কয়েকটি ভবনে নির্বিচার গুলি চালায়। এদিন অভিযানে অন্তত পাঁচটা হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে। হেলিকপ্টারগুলো ৬ হাজার অধিবাসীর গ্রামটির ওপর ঘুরে ঘুরে গুলিবর্ষণ করে। এতে পিডিএফের দুই নেতা ও সাত গ্রামবাসী নিহত হয়। সেনা সরকারের মুখপাত্র জ মিন তুনও এই অভিযানের কথা স্বীকার করেছেন।

সশস্ত্র গোষ্ঠী কারেনি ন্যাশনালিটি ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ) জানিয়েছে, সেনাদের দেওয়া আগুনে অন্তত ২০টি বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখানেও জান্তা সেনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে কেএনডিএফ।

ছায়া সরকার বা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের কর্মকর্তারা বলেছেন, হামলার মুখে পলায়নপর ৮ সেনাকে আটক করেছে পিডিএফ ও কেএনএলএ’র যৌথ বাহিনী। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু রাইফেল ও মর্টারসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে মিয়ানমারে জান্তা সরকারের অত্যাচার-নিপীড়নে পরোক্ষভাবে তহবিল জোগাচ্ছে আন্তর্জাতিক রত্ন ব্যবসায়ীরা। তারা দেশটি থেকে জেমস্টোনের মতো মূল্যবান পাথর কিনছে। এর বিনিময়ে বিশাল অর্থ চলে যাচ্ছে জান্তা সরকারের হাতে। গ্লোবাল উইটনেস নামে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠনের এক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে। ‘কনফ্লিক্ট রুবিজ : হাউ লাক্সারি জুয়েলার্স রিস্ক ফান্ডিং মিলিটারি অ্যাবিউজ ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক ওই রিপোর্টটি চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের শুরুতে অভ্যুত্থানের পর দেশের হাজার কোটি ডলারের জেমস্টোন শিল্প এখন সেনাবাহিনীর হাতে। বর্তমানে এটা সেনাশাসকদের আয়ের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ খাত হয়ে উঠেছে।

মিয়ানমারের সরকারি তথ্য-উপাত্ত মতে, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বছরে ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার থেকে ৪১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের মূল্যবান পাথর বাণিজ্য করেছে মিয়ানমার। তবে এই মূল্যবান পাথরের বাণিজ্য লুকিয়ে-চুরিয়ে হওয়ার কারণে এর সঠিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না।

গ্লোবাল উইটনেসের রিপোর্ট মতে, ওই চার বছরে বার্ষিক গড়ে ১৭৩ কোটি ডলার থেকে ২০৭ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.