আইবিসিওএল ‘টিম ডিজিটাল ইনোভেশন’র সাফল্য

0 172
টিম ডিজিটাল ইনোভেশন

প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েই রৌপ্যপদক জিতেছে চার প্রকৌশলীর দল ‘টিম ডিজিটাল ইনোভেশন’ সম্প্রতি হংকংয়ে হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডে (আইবিসিওএল)। রোহিঙ্গাদের পরিচয় শনাক্তকরণ ও ত্রাণ বিতরণের প্রকল্পটির জন্য তারা এই পুরস্কার পেয়েছে।

রিদোয়ান খান অনিক, নওশাদ হোসেন, কামরুল হাসান অনিক, কামরুল হাসান—সবাই লিডস করপোরেশনে একই দলে কাজ করেন। সেখানে তাঁদের কাজ মূলত ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়েই।

কাজের বাইরে ব্যক্তিগতভাবেও তাঁরা এই প্রযুক্তি নিয়ে বেশ আগ্রহী। ২০২০ সালের আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড আয়োজনের ঘোষণা আসার পরই তাঁরা এতে অংশগ্রহণে আগ্রহী হন।

পরস্পর যোগাযোগ শুরু করেন। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের যোগ্যতাগুলো সম্পর্কে জানতে গিয়ে দেখেন, অংশগ্রহণের অন্যতম পূর্বশর্ত, ২০১৭ সালের পরে স্নাতক শেষ হয়েছে এমন হতে হবে।

রিদোয়ানরা সবাই এই শর্তের মধ্যে পড়েন। তাঁরা সবাই মোটামুটি সদ্যঃস্নাতক সম্পন্ন করা। ফলে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ইচ্ছা আরো যায় বেড়ে। আর এই আগ্রহের কথা জানানো হয় তাঁদের প্রতিষ্ঠানের টিম লিডারকে।

প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের অনুমতি আদায় করে দিলেন তিনিই। এরপর চারজন মিলে একটি দল গঠন করেন এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধনও করে ফেলেন।

দল গঠন হয়ে গেলেই আইডিয়া নিয়ে ভাবতে থাকেন সবাই। একেকজন একেক আইডিয়া উপস্থাপন করেন। পরে সবাই মিলে ঠিক করেন যে রোহিঙ্গাদের পরিচয় শনাক্তকরণে ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবেন তাঁরা।

প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘রোহিঙ্গা শনাক্তকরণ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা’। ২০২০ সালের এপ্রিলে জাতীয় ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করেন তাঁরা। সেখানে চতুর্থ স্থান লাভ করেন এবং পুরস্কার হিসেবে পান ৪০ হাজার টাকা।

এরপর জাতীয় ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড জুরিবোর্ড তাঁদের আরো প্রশিক্ষণ দিতে থাকে। একই সঙ্গে প্রকল্পটির আরো উন্নতির জন্য কাজ করতে থাকেন তাঁরা। বাংলাদেশ থেকে মোট ১২টি দল আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডের এবারের আসরে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।

২০২০ সালের আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড হংকংয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও কভিড-১৯-এর কারণে তা অনলাইনে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৩ থেকে ৫ জুলাই অনলাইনে হয় প্রতিযোগিতা।

পুরো অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতা স্ন্যাক ও জুমের সাহায্যে সম্পন্ন হয়। স্ন্যাক অ্যাপে প্রতিটি দলের জন্য আলাদা প্যাভিলিয়ন ছিল। প্রতিটি অঞ্চলের জন্যও আলাদা প্যাভিলিয়ন ছিল।

তাঁরা প্যাভিলিয়ন ঘুরে ঘুরে অন্যদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আসেন তাঁদের প্রজেক্ট দেখতে এবং রিভিউ দেওয়ার জন্য। নিজেদের প্রজেক্টের প্রটোটাইপ নিয়ে তাঁরা প্রথমে একটি ভিডিও দেখান এ

বং একটি হোয়াইট পেপারও জমা দিতে হয়, যাতে প্রজেক্টের বিস্তারিত ছিল। বিচারকরা এবং অন্য দলের সদস্যরা তাঁদের নানা প্রশ্ন করেন এবং প্রকল্পটি নিয়ে বেশ প্রশংসাও করেন।

তাঁদের প্রজেক্টটি ছিল সঠিকভাবে পরিচয় শণাক্তকরণের মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে সহায়তা দেওয়া। বর্তমানে অনেক পদ্ধতি রয়েছে, যেসবের মাধ্যমে শণাক্তকরণের সুবিধাটি পাওয়া সম্ভব।

কিন্তু তাঁরা এটির সঙ্গে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করায় সিস্টেমটির সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পায়। এই সিস্টেমের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে কী পরিমাণ, কবে, কখন, কিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হলো, তা খুব সহজেই বের করা যাবে।

ফলে ত্রাণ বিতরণ প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করা যাবে। এই সিস্টেমে ইউনেসকো কর্তৃক প্রদত্ত পরিচয়টিকে ব্লকচেইনের আওতায় এনে প্রত্যেক রোহিঙ্গা ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট পরিচয় প্রদান করা হবে।

বিভিন্ন এনজিও এবং ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থাকে এই সিস্টেমের আওতায় ব্লকচেইনভিত্তিক নিবন্ধন করা যাবে। এমনকি ক্যাম্পভিত্তিক ত্রাণ বরাদ্দকরণ এবং সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ত্রাণ বিতরণ সম্পন্ন করা যাবে।

এ ছাড়া যেকোনো পরিস্থিতিতে পূর্ববর্তী ত্রাণ বিতরণের বিস্তারিত তথ্য দেখা যাবে। ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি যেকোনো ধরনের দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.