রোজার মাসে কেন চলবে ব্যবসার নামে এই লুণ্ঠনবৃত্তি!

কয়েক দিন আগে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ কাতার সরকার ভোগ্যপণ্যসহ ৬ শতাধিক পণ্যের দাম কমিয়েছে। রোজা উপলক্ষ্যেই পণ্যমূল্য কমিয়েছে কাতার সরকার। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো রোজার মাসে পণ্যের দাম কমায়, এটাই তাদের রেওয়াজ। অথচ অন্যতম বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র আমাদের এই প্রিয় স্বদেশে রোজা না আসতেই ব্যবসায়ী ভাইয়েরা পণ্যমূল্য বাড়িয়ে রোজাদারসহ ভোক্তা সাধারণকে অশেষ দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দেয়।

রোজার মাসে কেন এই অসংযম ও অমিতাচার! রোজার দিনে কেন চলবে ব্যবসার নামে এই বেপরোয়া দস্যুবৃত্তি! সংযম সাধনা ও আত্মশুদ্ধির বার্তার মাধ্যমে রোজাদারকে শুদ্ধচারি জীবনবোধে উদ্বুদ্ধ করে মাহে রমজান। ভোজন-আহ্লাদে মত্ত থাকা বা কাউকে ভোগ-বিলাসে ডুবিয়ে রাখার জাগতিক কোনো বিষয়ের সাথে রোজার কোনো সম্পর্ক না থাকা সত্তেও লাখ টন ছোলা এক দিনেই নিশেষ হয়ে যায় এই রোজায়।

ইফতারির নামে ভোজন উৎসবে একাত্ম হয়ে গেলে তখন এ ধরনের পণ্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা আদৌ সম্ভব কি-না তা সর্বাগ্রে ভাবতে হবে ভোক্তা রোজাদারকে। বাজারে কোনো পণ্যের চাহিদা খুব বেড়ে গেলে এর সুযোগ নেয় মুনাফা শিকারী ব্যবসায়ীরা। রোজায় পণ্যমূল্যের অযাচিত বৃদ্ধির জন্য তাহলে ব্যবসায়ী ও রোজাদার দু’পক্ষই যে অভিযুক্ত তা অস্বীকার করা যাবে কী? ব্যবসায়ী এবং রোজাদার ভোক্তারা যদি লুণ্ঠনবৃত্তি ও অসংযমে নিমগ্ন হন বাড়ে পণ্যমূল্য, বাড়বে ভোগান্তি। হালাল ব্যবসা বাণিজ্য তো প্রিয় নবীর (দ) সুন্নাত। কিন্তু ব্যবসার আড়ালে প্রতারণা ও ঠকবাজির আশ্রয় নেয়া জুলুম। ব্যবসায় ন্যূনতম প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হলে ব্যবসার সমুদয় আয় হারাম উপার্জনের শামিল।

ইসলামের বাণিজ্যনীতি অত্যন্ত ভোক্তাবান্ধব ও ব্যবসানুকূল। যেমন হযরত আবদুল্লাহ (রাদ্বি আল্লাহু তা’আলা আনহু) থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “হালাল ও বৈধ পন্থায় জীবিকা উপার্জন করা ফরজ নামাজের পর ফরজ”। (বায়হাকি) অন্য আরেকটি হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “কোনো বান্দা যদি হারাম বা অবৈধ পন্থায় ধন-সম্পদ উপার্জন করে তা থেকে দান করলে তা গৃহীত হবে না, তা থেকে ব্যয় করলে তাতে বরকত বা সাওয়াব দেয়া হবে না। আর সে যদি তা পরবর্তী বংশধরদের জন্য রেখে যায়, তাহলে সে যে জাহান্নামের অবলম্বনই রেখে গেলো”। আরেকটি হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “হারাম খাওয়ার মাধ্যমে বর্ধিত শরীর জান্নাতে যাবে না।” (বায়হাকি) হাদিসের এ নির্দেশনা অনুসরণে চাই সকলের সচেতনতা ।

ঈমানদার মুসলমানরা মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ্ তা’আলা ও তাঁর প্রিয় হাবীবের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সন্তুষ্টি লাভের জন্য তৎপর থাকেন। আমীরুল মুমেনীন হযরত ওমর ফারুকে আজম (রাদ্বিআল্লাহ্ আনহু) থেকে বর্ণিত, নূর নবী হযরত রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন “যে ব্যক্তি পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহ তা’আলার স্মরণে তন্ময় থাকে তার পাপরাশি মোচন হয়ে যায়। প্রার্থনাকারী কখনো বিফল মনোরথ হয় না”। সবাইকে এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য হালাল রিয্ক ভক্ষণ করা প্রধান শর্ত। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “অনেক প্রার্থনাকারী হাত উত্তোলন করে ইয়া রব ইয়া রব (ও হে প্রভু ওহে প্রভু) শব্দে প্রার্থনা করে থাকে, তাদের অবৈধ পানাহার ও অবৈধ ভূষণে কীরূপে দোয়া মঞ্জুর হবে? আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, “হে মুমিনরা তোমরা আমার প্রদত্ত হালাল পবিত্র রিয্ক থেকে ভক্ষণ করো।”

আমাদের প্রিয় নবী (দ) ও তাঁর ন্যায়নিষ্ঠ সাহাবারা রোজায় ইফতার করতেন সামান্য খেজুর ও বিশুদ্ধ পানীয় দিয়ে। মূলত, সংযমবৃত্তি দেখা যায় এখানে। ইফতার-সাহরির নামে ভোজন উৎসবে মেতে থাকা রোজাদারের লক্ষ্য হতে পারে না। সবাই সংযমী হলে দুর্ভোগ-দুর্দশার পথ রুদ্ধ হবেই। ফিরে আসবে শান্তি-স্বস্তি। আল্ল¬াহ্ পাক আমাদেরকে মাহে রমজানে সংযম সাধনার শিক্ষায় উজ্জীবিত করুন। সবক্ষেত্রেই সৎ ও সত্যনিষ্ঠ হয়ে চলে ইসলাম নির্দেশিত কল্যাণমূলক গণবান্ধব ব্যবসানীতি উপলব্ধির তৌফিক দিন। আমীন।

লেখক- আ ব ম খোরশিদ আলম খান। সাংবাদিক ও ইসলামী চিন্তাবিদ।

Comments (0)
Add Comment