নতুন ধরনের করোনার সংক্রমণে আরো বেশী মানুষ মারা যেতে পারে


যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে পড়া SARS-CoV-2 নভেল করোনাভাইরাসের বিবর্তিত নতুন ধরন বা স্ট্রেইনটি অধিক সংক্রামক এবং এই স্ট্রেইনের সংক্রমণে আগামী বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে নতুন একটি গবেষণায় জানা গেছে। সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এ খবর জানিয়েছে। নতুন এই রুপটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে যুক্তরাজ্য এবং এর ইউরোপীয় প্রতিবেশী দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে পরিবহন সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক ও সিঙ্গাপুরে এই নতুন ভাইরাস কে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে।

বেলজিয়ামের গণমাধ্যমে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে সেখানে এ ধরনের রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের, পরীক্ষামূলক ওষুধের অধ্যাপক পিটার ওপেনশো বলেন নতুন ভাইরাসকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরিদর্শক অধ্যাপক শোন ফিৎসগোরাল্ড বলেছেন পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

মূল উদ্বেগের কারণ হলো নতুন SARS-CoV-2 ভাইরাসটির সংক্রামক কারী ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি। এরমধ্যে জিনগত ২৩ টি মিউটেশন রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেছে এটি ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রমক। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বলেছেন যে এটির পুনরুৎপাদনের হার বাড়িয়ে তুলতে পারে। দ্রুত বৃটেনের ছড়িয়ে পড়ায় মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা আরো কঠিন হয়ে পড়েছে এবং অন্যান্য দেশের জন্য ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে গেছে।

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সেন্টার ফর ম্যাথমেটিক্যাল মডেলিং অব ইনফেকশাস ডিজিজের গবেষণা বলছে, করোনার নতুন ধরনটি অন্যান্য স্ট্রেইনের তুলনায় ৫৬ শতাংশ বেশি হারে ছড়াতে সক্ষম। তবে নতুন স্ট্রেইনটির কারণে কোভিড-১৯ কম কিংবা বেশি গুরুতর হয়ে ওঠে কি না, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাজ্য সরকার এর আগে জানিয়েছিল, করোনার নতুন বিবর্তিত SARS-CoV-2 অন্যান্য প্রচলিত স্ট্রেইনের তুলনায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হারে ছড়াতে পারে বলে দেখা গেছে। এর পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা প্যাট্রিক ভ্যালান্স গত ১৯ ডিসেম্বর বলেছিলেন, করোনার নতুন ধরনটির মধ্যে প্রায় দুই ডজন রূপান্তর ঘটেছে, যা করোনাভাইরাসের তৈরি প্রোটিন অংশকে আক্রান্ত করতে পারে।

উল্লিখিত কারণে পরীক্ষা, চিকিৎসা এবং সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হওয়া টিকাদান করোনার এই নতুন স্ট্রেইনের ক্ষেত্রে কম কার্যকর হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবশ্য ইউরোপের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, করোনার নতুন ধরনটি হয়তো আগেরগুলোর চেয়ে এতটা ভিন্ন নয় যে ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি করোনা টিকাকে ফাঁকি দিতে পারবে।

নভেম্বরে লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল যুক্তরাজ্য। এবারও একই পদক্ষেপ নিয়েও স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না রাখলে এই সংক্রমণ কমানোর নিশ্চয়তা নেই বলে গবেষণায় দাবি করা হয়। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে দুই লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। আরো দ্রুত টিকা দেওয়া গেলে অর্থাৎ প্রতি সপ্তাহে ২০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া গেলে নতুন স্ট্রেইনটি বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন নিয়ে আলোচনা করতে গত বুধবার সদস্যদের বৈঠক ডেকেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার এই নতুন ধরনকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তার কৌশল আলোচনা করা হয় ওই বৈঠকে।

করোনার নতুন ধরন নিয়ে ব্যাপক ভীতির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটি বলেছে, এটি মহামারির বিবর্তনের একটি স্বাভাবিক অংশ।

SARS-CoV-2SARS-CoV-2 ProtectionSARS-CoV-2 Safety
Comments (0)
Add Comment