ট্রান্সজেন্ডার নারীকে যৌন নির্যাতনও হত্যাচেষ্টার ঘটনার মূলহোতাসহ আটক ৩

ঢাকার একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী বিউটি ব্লগারকে আটকে রেখে মোবাইল ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠার পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‍্যাব)।

বিউটি ব্লগার সাদ বিন রাবী ওরফে সাদ মুআ অভিযোগ করেছেন, ট্রান্সজেন্ডার হওয়ার কারণেই তিনি এইরকম হামলার শিকার হয়েছেন।

সাদ মুআ রবিবার বিবিসির সাথে আলাপকালে নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত নারী বলে পরিচয় দিলেও গত বছর নভেম্বর মাসে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজেকে নন বাইনারি বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।

র‍্যাব জানিয়েছে, আটককৃতরা একটি চক্র হিসাবে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতো।

এই ঘটনায় গত শুক্রবার ঢাকার ভাটারা থানায় যৌন নির্যাতন ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে।

অভিযোগে যা বলা হয়েছে

অভিযোগে বলা হয়, সাদ মুআকে নির্যাতনের ওই ঘটনাটি ঘটে জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায়।

সাদ মুআ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, কিছুদিন আগে সামাজিক মাধ্যমে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।

”১০ই জানুয়ারি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খাচ্ছিলাম। সেই সময় তিনি ফোন করে দেখা করতে চান। তাকে আমি সেখানে আসতে বলি। তিনি কিছুক্ষণ পরে ফোন দিয়ে বলেন, রেস্তোরাঁর ভেতরে আসতে চান না, আমাকে বাইরে আসতে বলেন। পরে বাইরে গিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়।”

সেই সময় ওই ব্যক্তি ‘তার বাসা কাছেই’ এবং ‘সাদ মুআ সেলেব্রিটি হওয়ায় তাকে বাসায় নিয়ে স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দিতে চান’ জানিয়ে তাকে বাসায় যাওয়ার অনুরোধ করেন। তারপর সাদ মুআ ওই বাসায় যান।

সাদ মুআ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ”বাসায় গিয়ে একটি রুমে বসার পরেই একজন নারী ও পুরুষ এসে ভিডিও করতে শুরু করে আর নানা প্রশ্ন করতে থাকে। তারা আমার জেন্ডার নিয়েও খারাপ খারাপ কথা বলতে থাকে। আমি নাকি সেখানে অনৈতিক কাজ করতে গিয়েছি, এসব কথা বলে।”

”তারা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক বলে পরিচয় দেয়। তাদের সঙ্গে অস্ত্র, ওয়াকিটকিও ছিল। তারা বলে, আমি যদি তাদের কথা না শুনি বা টাকাপয়সা না দেই, তাহলে আমাকে মেরে ফেলবে। বাইরে নাকি তাদের আরও পাঁচজন লোক দাঁড়িয়ে আছে,” তিনি বলছেন।

”তারা আমাকে বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করে। কাপড়চোপড় খুলে ভিডিও বানায়। আমাকে মারধর করে। জীবন বাঁচাতে ওরা যা বলতে বলে, আমি সেটাই বলি। ওরা সেটা ভিডিও করে,” সাদ মুআ বলছেন।

সেই সময় তার কাছে এক লক্ষ টাকা দাবি করা হয়।

এরপর তার মুঠোফোন, চেইন, বিকাশের টাকা নিয়ে নেয় ওই ব্যক্তিরা। এরপর তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে বলে গাড়িতে তোলা হয়। রামপুরার দিকে একটি খাবারের দোকানে তাকে বসিয়ে তারা চলে যায়, অভিযোগ সাদ মুআর।

সাদ মুআ বলছেন, ”আমি ভেবেছি, তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক। তাহলে আমি কাদের কাছে যাবো, কাদের কাছে অভিযোগ করবো? পরে ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের কাছে বিষয়টি শেয়ার করি। তাদের পরামর্শে ১৩ই জানুয়ারি ভাটারা থানায় যাই।”

কিন্তু তখন তিনি তাদের নাম বা বাসার ঠিকানা বলতে পারেননি। কিন্তু ভাটারা থানা পুলিশ বিস্তারিত তথ্য জানতে চায়। পরের কয়েকদিন তিনি নিজে ঘুরে ঘুরে সেই বাসাটি খুঁজে বের করেন।

সেই সময় তিনি র‍্যাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। তাদের সহায়তায় ২১শে জানুয়ারি পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করে। সেখানে যৌন নির্যাতন ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, তার কাছ থেকে একটি আইফোন (১২ প্রো ম্যাক্স), হোয়াইট গোল্ডের চেইন, ডেবিট কার্ড ও পাসওয়ার্ড, বিকাশ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ডসহ প্রায় আড়াই লাখ টাকার সামগ্রী কেড়ে নিয়েছে ওই চক্র।

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”অভিযোগ পাওয়ার পরে আমরা মামলা নিয়েছি। এখন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আমাদের তদন্ত চলছে।”

সাদ মুআ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এদের কাউকে তিনি আগে থেকে চিনতেন না।

”আমি ট্রান্সজেন্ডার বলেই তারা আমার ওপর হামলা করেছে। ওরা বেসিক্যালি আমাদের মতো মাইনরিটি যারা আছে, ট্রান্সজেন্ডার, হিজড়া, তাদের টার্গেট করে এগুলি করে। কারণ জানে, ওদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই। তারা ভেবেছে, আমি দুর্বল, আমার পক্ষে কেউ দাঁড়াবে না, তাদের কেউ কিছু বলবে না। এই জন্যই তারা আমার সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করার সাহস পেয়েছে,” তিনি বলছেন।

র‍্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার তিন জন

সাদ মুআ’র ওপর যৌন নির্যাতন ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলার পরেই এই বিষয়ে র‍্যাব তদন্ত শুরু করে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলছেন, ”মামলার পরেই আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করতে শুরু করি। এরপর ঢাকার ফার্মগেট ও মহাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে শনিবার সকালে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

এদের মধ্যে একজন পুরুষ সদস্য নিজেকে সেনা অফিসার ও আরেকজন নারী সদস্য নিজেকে আরজে এবং পুলিশ কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতো, দাবি র‍্যাবের।

র‍্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, এই চক্রটি এর আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম-পরিচয় ভাঙ্গিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। তিনজনের মধ্যে দুইজনের নামে আগের মামলা রয়েছে। তাদের কাছ থেকে ওয়াকিটকি সেটও উদ্ধার করা হয়েছে।

ট্রান্সজেন্ডার নারীকে যৌন নির্যাতনও হত্যাচেষ্টার ঘটনার মূলহোতাসহ আটক ৩দেশী টুয়েন্টিফোর
Comments (0)
Add Comment