জরায়ু মুখের ক্যান্সার – সচেতনতা জরুরী

0 135

Uterus Cancer Awareness is very important

বাংলাদেশে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের আক্রান্ত মহিলাদের সংখ্যা বাড়ছে খুব দ্রুত। গ্রামের দিকে জরায়ু মুখের ক্যান্সারে মহিলারা বেশিন আক্রান্ত হচ্ছে। ২০১০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে প্রতি বছর ১ লক্ষ ৩৪ হাজারের ও বেশি মহিলা প্রতি বছর জরায়ু মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হোন এবং ৭২ হাজারের বেশি মহিলা মারা যান।  আশ ঙ্কা করা যাচ্ছে ২০২৫ সালে সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়াবে ২ লক্ষ ৩ হাজারের বেশি আর মৃত্যুর সংখ্যাস দাঁড়াবে ১ লক্ষ ১৫ হাজারের বেশি।

কি কারণে হয় জরায়ু মুখের ক্যান্সারঃ এক গবেষণায় জানা গেছে, জরায়ু মুখের ক্যান্সার- HPV হিউম্যান প্যাপিলামো ভাইরাস নামক এক ধরনের ভাইরাসের সংক্রমনে ঘটে থাকে। জরায়ু মুখ একটি ছোট অংশ যা জরায়ু ও যোনিদ্বারকে মিলিত করে। অধিকাংশ সময় দেখা যায় জরায়ু মুখের বাইরের অংশে ক্যান্সার ধরা পড়ে। আসলে HPV ভাইরাস টি যে কোনো যৌন সঙ্গমে অভ্যস্ত মহিলার যৌন দ্বারের আশেপাশে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ভাইরাস সংক্রমণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বারা কমিয়ে আনতে পারে। কিন্তু যদি এ ভাইরাস টি না সারে তবে ১৫-২০ বছর পর্যন্ত এরা যোনিদ্বারের আশেপাশে অবস্থান করে এবং ধীরে ধীরে এরা জরায়ুর মুখের ক্যান্সার ঘটায়।

লক্ষণঃ প্রাথমিক স্তরে থাকাকালীন এর লক্ষন বোঝা যায়না। তবে আক্রান্ত হলে সহবাসে রক্তস্রাব, যোনিদ্বারে অস্বাভাবিক রক্তপাত, স্বাভাবিক ঋতুস্রাবের পরিবর্তন, অন্তর্বর্তীকালীন ঋতুস্রাব, সাদা স্রাব দেখা যায়। এ লক্ষন দেখা গেলে বোঝা যায় ততক্ষনে ক্যান্সার শেষস্তরে ঠেকেছে।

প্রতিরোধঃ জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধের সহজ উপায় হচ্ছে তিন বছর অন্তর অন্তর ৩০ বছরের ঊর্দ্ধ মহিলাদের প্যাপস্মিয়ার টেস্ট করিয়ে ক্যান্সারের সম্ভাবনা আছে কিনা তা দেখার জন্য। যদি প্রাথমিক ভাবে ক্যান্সার কোষ ধরা পড়ে তাহলে সহজেই তা চিকিতসা করা যায়। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট হলো HPV-DNA টেস্ট। যদি এই রেজাল্ট পজিটিভ হয় তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

পরবর্তী পদক্ষেপঃ যদি HPV পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হয় তাহলেও প্রতি সাত বছর অন্তর অন্তর এই পরীক্ষা করা যেতে পারে। আর যদি পরীক্ষার ফল হয় পজিটিভ বা কারো অত্যাধিক সাদা স্রাব বা সহবাসে রক্তস্রাব দেখা যায় তখন চিকিতসক রা কলপোস্কপি করে থাকেন। যদি প্রাথমিক ভাবে ক্যান্সার পরিবর্তন দেখা যায় তাহলে তা সহজেই চিকিতসা করা যায়। বর্তমানে HPV প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়েছে। এ ভ্যাকসিন নয় থেকে পয়তাল্লিশ বছরের মেয়েদের দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এই প্রতিষেধক মহিলাদের যৌনজীবনের পূর্বে দেয়া বাঞ্চনীয়। এর ফলে HPV ভ্যাকসিনে ৭০-৮০ শতাংশ জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়।

স্টেজঃ জরায়ু মুখের ক্যান্সারে ডাক্তারি পরীক্ষা করে বলা হয় তা ক্যান্সারের কোন স্টেজে রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে অপারেশন বা রেডিও থেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সার মোকাবিলা করা যায়। কিন্তু অ্যাডভান্স পর্যায়ে শুধুমাত্র রেডিওথেরাপির দ্বারায় ক্যান্সার মোকাবেলা করা সম্ভব। তবে এটা বলা যায় যে অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনাইয় এ ক্যান্সারে সেরে উঠার সম্ভাবনা বেশি। রেডিও থেরাপির ফলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা যায়। পায়খানার সঙ্গে রক্ত বেরোতে পারে। কিছুক্ষেত্রে রেডিও থেরাপির পর ও ক্যান্সার আবার ফিরে আসে সে ক্ষেত্রে ক্যামোথেরাপির দরকার হয়।

কিছুকথাঃ যোনি মুখের ক্যান্সারে চিকিৎসা আছে। তবে বলা যায় যে সুস্থ পরিবেশে বেঁচে থাকা আর পুষ্টিকর খাদ্যভাসের দিকে নজর দেয়া সবার আগে প্রয়োজন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.