কেন মশা সবাইকে ফেলে আপনাকেই বেশি কামড়ায়!

0 121

why mosquitoes like you rather than othersমনে করুন সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন কোন পার্কে বা খোলা মাঠে বা চায়ের দোকানে। কিন্তু আপনাকে বাগড়া দিল কিছু বেরসিক মশা। আর সবচেয়ে অদ্ভুত হলো মশা গুলো আপ্নাকে বেছে নিয়েছে কামড়াতে। বাকি বন্ধুদের বাদ দিয়ে ড্রাকুলার মত চুষে নিচ্ছে শুধু আপনার ই রক্ত। চিন্তা করছেন আপনিই কেন! আপনিই কি একমাত্র হতভাগা? আসলে নিজেকে এত একা ভাবার কোন কারণ নেই। আপনার মত পৃথিবীর ২০% মানুষকে মশারা একটু বেশি সুস্বাদু মনে করে।

কি কি কারণে এসব হতে পারে তা জেনে নিনঃ-

১) রক্তের গ্রূপঃ মশা আসলে আমাদের কামড়ায় কারণ সে আমাদের রক্ত থেকে প্রোটিন খেতে চায়। কারো কারো যেমন গরু বা খাসির মাংসের চাইতে মুরগির মাংস বেশি ভাল লাগে তেমনিই কিছু কিছু রক্তের টাইপ কে মশা অন্য টাইপের চেয়ে বেশি পছন্দ করে। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, “ও” গ্রূপের মানুষ কে মশা “এ” গ্রূপের মানুষের চেয়ে দ্বিগুন বেশি পছন্দ করে। “বি” গ্রূপের মানুষদেরকে মাঝামাঝি পছন্দ করে মশা সম্প্রদায়। কিন্তু ব্যাপার হলো মশা কিভাবে বুঝে কোন মানুষের রক্ত কি টাইপ? তা একজন কামড়িয়ে কি অন্য জন কে খবর দেয় যে- ‘ওই ব্যাটা জটিল জিনিস খেয়ে আয়’ হে হে ব্যাপার টা মোটেও তেমন নয়। ৮৫% মানুষ তাদের ত্বক দিয়ে এমন এক রাসায়নিক নিঃস্বরণ করে যা দ্বারা বোঝা যায় রক্তের টাইপ কি! মশাও সে অনুযায়ী বুঝে নেয়। আবার যে ১৫% মানুষ কোন রাসায়নিক নিঃস্বরন করেনা তাদের চেয়ে নিঃস্বরন যারা করে তাদের কে মশা বেশি পছন্দ করে।

২) ত্বকের ব্যাকটেরিয়াঃ খুব বেশি আশ্চর্যজনক হলেও ত্বকের উপর ব্যাকটেরিয়ার যে ধরণ আছে সেটার উপর নির্ভর করে আপনার প্রতি মশা আকৃষ্ট হবে কিনা। ২০১১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে মশা কোন কোন নির্দিষ্ট ধরণের ব্যাকটেরিয়াকে অন্যদের চেয়ে বেশি পছন্দ করে। আশ্চর্যের বিষয় হলো যদি আপনার ত্বকে অনেক বেশি ব্যাকটেরিয়া কিন্তু কম রকমের থাকে সংখ্যায় বেশি থাকে কিন্তু বিচিত্রতা থাকে তবে মশা আপনাকে কম কামাড়াবে। আমাদের হাঁটু বা গোড়ালির দিকে ব্যাকটেরিয়ার বৈচিত্র বেশি বলে দেখবেন সেখানে মশা বেশি কামড়াচ্ছে।ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার ধরণ এবং সংখ্যা  মশাকে আপনার প্রতি বেশি আকৃষ্ট করতে পারে।

৩)গর্ভধারণঃ দূর্ভাগ্যজনক বশত মশা গর্ভাধারীনি মহিলা দের বেশি কামড়ায়তার কারণ বিশেষত দুইটা। বেশি কার্বনডাই অক্সাইড নিঃস্রন করা ও দেহের তাপমাত্রা সাধারণের চেয়ে ১.২৬  ডিগ্রি বেশি।

৪) কার্বন ডাই অক্সাইডঃ আমরা যে নাক মুখ দিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়ি সেটা তো জানেন ই। ব্যাপার হলো মশারা ১৬৭ ফুট থেকে এই গন্ধ বুঝতে পারে। এই কাজে তারা ম্যাক্সিলারি পাম্প নামক এক অঙ্গ ব্যবহার করে। সে জন্য যারা এ গ্যাস বেশি নিঃসরণ করেন তারা মশা দ্বারা আকৃষ্ট হবেন বেশি। বিশেষ করে মোটা ও আকারে বিশাল যারা তারা কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস বেশি নিঃসরণ করেন। তাই ছোটদের চেয়ে বড়দের মশা বেশি কামড়ায়। এটি ছোটদের জন্য সুখবর ও বটে।

৫) ব্যায়াম এবং পরিপাকঃ ঠিক কার্বন ডাই অক্সাইডের মশা দেহের কাছাকাছি আসলে ল্যাকটিক অ্যাসিড, ইউরিক অ্যাসিড, এমোনিয়া এবং আর কিছু রাসায়নিকের গন্ধ নিতে পারে যেগুলি মানুষের ঘামগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। জেনেটিক ভাবেই আপনি নিঃসরন করতে পারেন এসব যৌগ। আবার তপ্ত দেহও মশাকে আকৃষ্ট করে। যেহেতু ব্যায়াম ল্যাকটিক এসিড নিঃসরন ঘটায় এবং শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে সেহেতু যে ব্যায়াম করবে তাকে মশা অন্যদের চেয়ে বেশি পছন্দ করবে।

৬)বিয়ারঃ- একটি ছোট বোতল বিয়ার খেলেই আপনি মশাদের কাছে প্রিয় খাবার হয়ে যাবেন। মশারা কি এলকোহল পছন্দ করে মাতাল হতে? হয়তো তা নয়। আসলে এলকোহল ঘামগ্রন্থি থেকে দিয়ে নিঃসৃত হয়, মশা সেটা শুঁকতে পারে। আবার মদ্যপানে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তবে এই দুইটার সঙ্গে মশা কামড়ানোর খুব একটা যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া যায়না। তাই বিয়ার খেলে কেন মশা কামড়াবে সেটা এখনো অজানাই আছে।

৭) জামার রঙঃ- এটা শুনতে অবাস্তব মনে হলেও সত্য যে মশা মানুষ কে চিনে দৃষ্টি দিয়ে। তাই আপনি যদি কালো, গাঢ় নীল বা লাল জামা পড়ে মশাপ্রবন এলাকায় যান তবে আপনার খবর আছে। কারণ তখন মশা ভীড়ের মধ্য থেকে আপনাকেই বেশি খুঁজে পাবে।

৮) জিনগতঃ- আসলে এখানে এগুলা উল্লেখ করলাম তার অনেক গুলোই অন্তনির্হিত কারণ হল জেনেটিক। প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে জিনেটিক তথ্যই নির্ধারণ করবে আপনি মশার জন্য আকর্ষণীয় কিনা। রক্তের গ্রূপ থেকে শুরু করে আপনার পরিপাক পর্যন্ত সবই জিনেটিক কারণে নির্ধারিত হয়। দূর্ভাগ্যজনক আপনাকে পরিবর্তন করে মশার জন্য কম আকর্ষণীয় করাটা সেজন্য কঠিন ব্যাপার, কারণ জিনে পরিবর্তন আনতে হবে।

৯) প্রাকৃতিক নিরোধকঃ- অনেকগুলি গবেষণাই খুঁজে দেখছ কেন কিছু মানুষকে মশা প্রায় কামড়াই না। আশা করছেন তাদের দেহ থেকেই খুঁজে পাবেন কোন প্রাকৃতিক পোকা নিরোধক।

কিছু রাসায়নিক খুঁজেও পাওয়া গিয়েছে যেগুলোর কাছাকাছি আসলে মশা ওয়াক থু করে। ভাবা হচ্ছে এমন কি রক্তের টাইপ, ব্যায়াম করা বা গর্ভাধারিনী মানুষকে  এইরকম রাসায়নিক দিয়ে স্প্রে করলে মশার হাত থেকে বাঁচানো যাবে।

মশার ভালবাসা পাওয়া মানুষের মধ্য আপনি একজন হতে পারেন যদি উপরের কোন পয়েন্ট আপনার মাঝে থাকে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.